বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ বাস্তবায়নের জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি: ফরহাদ মজহার

আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, ২০:২৭

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, আমরা কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্বকে জাতীয় নীতি আকারে গ্রহণ করি নাই। এই থ্রি জিরো তত্ত্বকে বাস্তবায়নের জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি। আমি ইউনূস ভাইকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বলছি কথাটা, এটা তার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে। এই বাজেটে তারা বলছে থ্রি জিরো বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এটার জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থানটা করি নাই।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাজেট সংলাপ ২০২৫’ এ তিনি এসব কথা বলেন।

থ্রি জিরো তত্ত্ব নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‌‘এই বাজেটে তারা বলছে তারা থ্রি জিরো বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এটার জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করি নাই। আমরা চেয়েছি ভিন্ন ধরনের বাজেট। যেখানে লুটপাটতন্ত্রকে অবৈধ বলা হবে। এটা পেলেই যথেষ্ট। আর তার তত্ত্ব (থ্রি জিরো) সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য আলাদা। সেটা আমরা আলাদা করবো। এটা একটা ব্যক্তির স্বপ্ন আমরা এটার প্রসংশা করি। কিন্তু আমাদের কথা তার এই তত্ত্ব বাজেট প্রস্তাবনায় কেন? আন্তর্জাতিকভাবে এটার খ্যাতি থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে এই তত্ত্ব সঠিকভাবে নেই, এটা আলোচনার অধিকার আমাদের আছে। তাকে অসম্মান করার জন্য বলছি না, তবে এটা যদি বাজেটে ঢোকান তাহলে তিনি অসম্মানিত হবে।

এই রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচিত সরকার, তবে অন্তর্বর্তী বটে। আমাদের লুটেরা-মাফিয়াতন্ত্রওয়ালারা বলে এটা অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারকে আমরা মেনে নিয়েছি কেন...যেহেতু আমরা মনে করি জনগণ তাদের এটা দিয়েছে। কাজেই এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাজেট সংলাপে কথা বলছেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘এই বাজেটটা আমাদের যথেষ্ট সন্তুষ্ট করতে পারে নাই। যে স্পিরিটটা আমরা বাজেটে দেখতে চেয়েছি, সেটা দেখি নাই।’

গণঅভ্যুত্থানের পরে কালো টাকা সাদা হয় কোন যুক্তিতে প্রশ্ন রেখে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘লুটপাটতন্ত্রের সবচেয়ে দৃশ্যমান বিষয় হলো কালো টাকা সাদা করা। অবশ্যই এটাকে সংশোধন করতে হবে। কালো টাকা এখন সাদা হয় কোন যুক্তি? গণঅভ্যুত্থানের পরে এটা করার কোনও যুক্তি নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে সেনাবাহিনীর জন্য আমরা কীভাবে খরচ করি তার কোনও স্পষ্ট উল্লেখ নাই। এটা হতে পারে না। আমাদের এদিকে মায়ানমার, ওদিকে ভারত। তার মধ্যে যদি আমরা টিকে থাকতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাকে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর তা করতে হলে এর জন্য খরচ আছে। এটা একটা ন্যায্য খরচ। সেই খরচ আমি কোথা থেকে তুলবো, কে দেবে? এটা থাকতে হবে, যে টাকাটা কোথায় খরচ হচ্ছে? বাজেটে খরচ কোথায় হচ্ছে, এটা লুকিয়ে রাখা একটি খারাপ লক্ষণ।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘লুটেরা শ্রেণি আমলাতন্ত্রকে বহাল রাখার জন্য তাদের টাকার একটা অংশ খরচ করে। এখন আবার দেখবেন যে, গণভোটের পরে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নামে আমলাতন্ত্রকে রেখে দেয়। একটা ছোট্ট শব্দ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। তারা বলে এটা রাখতে হবে, এর নামে আমলাতন্ত্র কে রেখে দেয়। ৮ তারিখে (গত বছরের ৮ আগস্ট) যে একটা সরকার করলেন, লুটপাটতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্যই। কিন্তু আপনি এই একটা সরকার করেছেন। এই সরকারের আসলে কিন্তু কোন ক্ষমতা নেই। এখন যে টিকে আছে, এটা বিরাট ব্যাপার, দোয়া করেন।’

ইত্তেফাক/এসএ