শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদ

বিগত সময়ে প্রত্যেক প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে: শারমীন এস মুরশিদ

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ১৭:২৮

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি আমাদের সকল অগ্রযাত্রাকে উইপোকার মতো খেয়ে ফেলেছে। সে সময়ে প্রত্যেক প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে।

শনিবার (২১ জুন) ঢাকার এফডিসিতে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস—২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

তিনি বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যেন দুর্নীতি না করেন সেই প্রত্যাশা থাকবে। একটি স্বৈরাচার সমাজব্যবস্থার ভিতরে আমরা একটি সংবেদনশীল, যত্নশীল পলিসি প্রত্যাশা করতে পারি না। বিগত সরকার বাল্য বিবাহের মতো একটি সংবেদনশীল সামাজিক বিষয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করে ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করেছিল। ফলে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আমাদের দীর্ঘদিনের অর্জন টেকসই হয়নি।

তিনি আরও বলেন, যেদেশে আইন করে যৌতুক বন্ধ করা যায়নি, বাল্য বিবাহ বন্ধ করা যায়নি, সেদেশে শুধু আইন দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা কঠিন। শিশুশ্রম সম্মানজনক নয়। এটি শিশুর অধিকার হরণ করে। কোন সমাজে শিশুশ্রম থাকলে সেখানকার অর্থনীতির নৈতিকতা থাকে না। দারিদ্র ও শিশুশ্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই শিশুশ্রম নিরসনে দারিদ্র বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না। রাষ্ট্র, সমাজ, প্রাইভেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান ও আইএলও বাংলাদেশ অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে যে রকম লুটপাট করেছে তা আমদের সকলের জানা। একইভাবে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের ছাপ রেখে গেছে বিগত সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বিগত আওয়ামী সরকার দুই দফায় বিভিন্ন প্রকল্পে যে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে তার সুফল পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত শ্রমজীবী শিশু নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আয় বর্ধনমূলক কাজের জন্য নির্ধারিত টাকা প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা আশা করবো হাসিনা সরকার পালিয়ে যাবার পর ক্ষমতার পালা বদলে দুর্নীতির যেন পালা বদল না হয়। 

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি। পথ শিশু রয়েছে ৩৪ লাখ। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ১১ লাখ শিশু। পথ শিশুদের ৯৪ শতাংশই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোন সুবিধা পায়না। ৫৮ শতাংশর বেশি পথ শিশুর কোন জন্ম সনদ নেই। এর মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের সাথে বাবা—মায়ের কোন যোগাযোগ নেই। বাবা—মা কোথায় থাকে সেটাও জানে না। মেয়ে পথ শিশুদের মধ্যে ৪৬ ভাগ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিক যত্নের অভাবে পথ শিশুরা অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। মাদক গ্রহণ, ছিনতাইসহ বিভিন্ন রকম সামাজিক অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ে এরা। অর্ধেকেরও বেশি পথ শিশু কোন প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত নয়। পথ শিশুদের বড় একটা অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় ফুটপাত, ট্রেন, বাস, লঞ্চঘাটে রাত্রি যাপন করে। এসব শিশুরা দারিদ্র্যতার কষাঘাতে নিষ্পেষিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুসমে নিয়োজিত হচ্ছে। নিজের ও পরিবারের আহার যোগাতে খাতা কলমের পরিবর্তে সেই কোমল হাতে তুলে নিচ্ছে শ্রমের বোঝা। 

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে, আইএলও’র পৃষ্ঠপোষকতায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহায়তায় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে “শিশুসমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের” শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন উপ সচিব রোকেয়া পারভীন জুই, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাবেক বিতার্কিক ড. এস এম মোর্শেদ, চাইল্ড লেবার বিশেষজ্ঞ আফজাল কবির খান ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত রিপন। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ  ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। 

ইত্তেফাক/এমএএস