মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বিদেশি ঋণে খেলাপি হলে দেশেও মিলবে না ঋণ

আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ০২:১২

বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি ঋণে খেলাপি হবে, তাদের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) ডেটাবেজে যুক্ত করা হবে। এতদিন বিদেশি ঋণে খেলাপিদের দেশে নতুন ঋণ পেতে সাহায্য করত।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক ঋণে খেলাপি কমানো এবং ঋণ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতদিন কেবল দেশীয় ঋণে খেলাপিদের তথ্য সিআইবিতে সংরক্ষিত থাকত। ফলে বিদেশি ঋণে খেলাপি হলেও সেই প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজেই নতুন ঋণ নিতে পারত। এই নতুন নিয়মের ফলে সেই সুযোগ আর থাকছে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক নভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণ ঝুঁকি নিরুপণ ও খেলাপি হ্রাসে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি এখন থেকে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, যাতে কোনো রেসিডেন্ট প্রতিষ্ঠান বিদেশি ঋণে খেলাপি করেও স্থানীয় উৎস থেকে আর কোনো সুবিধা নিতে না পারে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পর কোনো কোম্পানি তা পরিশোধ না করলে সরকারের কিছুই করণীয় নেই। তা সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতারা যাতে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়, সেজন্যই তাদের খেলাপির তথ্য সিআইবিতে সংরক্ষণ করে অভ্যন্তরীণ ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও অন্যান্য কারণে অনেক কোম্পানি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে তারা পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে নিচ্ছে এবং এর জন্য এককালীন কিছু বাড়তি চার্জ বা ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লাইবর (লন্ডন ইন্টার-ব্যাংক অফার্ড রেট) রেটের পরিবর্তে সোফর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) কার্যকর হওয়ার কারণেও বিভিন্ন ঋণের ক্ষেত্রে চার্জ ও ফিতে পরিবর্তন আসছে, যার জন্য কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হচ্ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০.১৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে ডলারের বিনিময় হার বাড়তে শুরু করার পর ব্যবসায়ীরা ডলার ঋণ পরিশোধের দিকে ঝুঁকতে থাকেন, কারণ এতে তাদের বিনিময় হারের ঝুঁকি এবং লোকসান বাড়ছিল। এর ফলে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে যেখানে এ ধরনের ঋণের স্থিতি ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার, তা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার কমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১১.৭৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে।

ইত্তেফাক/এমএএম