পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সহকারী পুলিশ সুপার পর্যায়ে বর্তমানে মোট ৪২৪টি পদ শূন্য রয়েছে। একই সঙ্গে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পর্যায়ের ১১৯ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত রয়েছেন, কিন্তু তাদের কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্ব নেই। অধিকাংশই প্রতিদিন হাজিরা দিয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকছেন।
এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করছে, তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। আমরা প্রস্তুত আছি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, অতিরিক্ত আইজিপির মোট ২৯টি পদের মধ্যে নয়টি, যার মধ্যে দুইটি গ্রেড-১ ও সাতটি সুপারনিউমারারি পদ এখনো শূন্য। ডিআইজির ১৫২টি পদের মধ্যে ৩৪টি শূন্য রয়েছে। ৩৪১টি অতিরিক্ত ডিআইজির মধ্যে দুটি, ১ হাজার আটটি অতিরিক্ত এসপির মধ্যে ৪৭টি এবং ১ হাজার ২৩১টি এএসপির মধ্যে ৩৩২টি পদ এখনো খালি। পুলিশ সুপারের ৭৪৬টি অনুমোদিত পদের কোনোটিই শূন্য না থাকলেও, অন্তত ৫৭ জন এসপি বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত আছেন, যাদের নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব নেই।
তবে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর ইত্তেফাককে বলেন, ‘পদোন্নতি, বদলি ও শূন্য পদ পূরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া।’ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির আগেই পদোন্নতি দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে নির্বাচন প্রস্তুতির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আশা করি নির্বাচনের আগেই পদোন্নতি হয়ে যাবে।’
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা :শীর্ষ পদ শূন্য থাকা এবং অনেক কর্মকর্তাকে কার্যত নিষ্ক্রিয় রাখায় বাহিনীর অনেক সিনিয়র কর্মকর্তার মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসপি বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছি। যদি কোনো অপরাধ করে থাকি, ব্যবস্থা নিন। কিন্তু কোনো দায়িত্ব না দিয়ে এভাবে বসিয়ে রাখা অত্যন্ত হতাশাজনক।’
একজন ডিআইজি বলেন, ‘গত সরকার আমলে আমার তিন ব্যাচ জুনিয়রদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। আমাকে কখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এখন অবসরের দ্বারপ্রান্তে এসে পদোন্নতি না পেলে আমি ডিআইজি থেকেই বিদায় নিতে বাধ্য হব।’
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কমপক্ষে ৪০ জন কর্মকর্তা, যাদের চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন ২৩ জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও ৫৭ জন কর্মকর্তা এসপি থেকে এএসপি পর্যায়ের পলাতক বা ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এদের অনেকেই শেখ হাসিনার সরকারের সময় রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত।
একজন অতিরিক্ত এসপি বলেন, ‘পদোন্নতি আর বদলি নিয়ে আমাদের মানসিক চাপ এত বেশি যে, বাহিনীর কৌশলগত দক্ষতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের চিন্তা অনেক সময় চাপা পড়ে যায়।’
নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতির নির্দেশ :আইজিপি বাহারুল আলম মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিছু দিন আগে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ডিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসভায় তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে মোবাইল টহল, গার্ড পোস্ট, কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তাসহ সব কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী বলেন, ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক অপরাধী শনাক্ত করে গ্রেফতার বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা শাখাসহ সবাইকে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে।