“চাকরির ক্ষেত্রে ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (কম্বাইন্ড) ডিগ্রিধারীরা প্রাধান্য পাবে”—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পশুপালন অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষদীয় ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতির পক্ষে জামিল হোসেন। তিনি বলেন, “২৯ জুন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ‘চাকরির ক্ষেত্রে কম্বাইন্ড ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেওয়ার’ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পশুপালন শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক ও বৈষম্যমূলক। এটি পশুপালন গ্র্যাজুয়েটদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে পশুপালন ডিগ্রিধারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ১৯৮০ সালের প্রস্তাবনার আলোকে ডিপার্টমেন্ট অব লাইভস্টক সার্ভিসেস (DLS)-কে দুটি ভাগে বিভক্ত করে চিকিৎসা ও উৎপাদন—এই দুই সেক্টরে আলাদা ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।”
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিমত
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল হক বলেন, “কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের একক অগ্রাধিকার দিলে দেশের প্রাণিসম্পদ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ চিকিৎসার পাশাপাশি উৎপাদনের দিকেও দক্ষতা প্রয়োজন, যা পশুপালন ডিগ্রিধারীরা সরাসরি অর্জন করে থাকেন।”
অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “একজন রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দায়িত্বশীল বক্তব্যে এমন বৈষম্যমূলক মনোভাব অগ্রহণযোগ্য। তথ্য ও বাস্তবতা যাচাই না করে এ ধরনের মন্তব্য দেশীয় প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ভেটেরিনারি ও পশুপালন—দুইটি আলাদা অনুষদ ভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। একটি চিকিৎসাভিত্তিক, অন্যটি উৎপাদনভিত্তিক। চাকরির ক্ষেত্রে উভয় শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দিতে হবে।”
অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, “খামারে প্রাণী সুস্থ রাখার পেছনে উৎপাদনবিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই বড় ভূমিকা রাখে। চিকিৎসা ও উৎপাদন—উভয় ক্ষেত্রের মধ্যে ভারসাম্য না রাখলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) ডিগ্রি আলাদা অনুষদ থেকে প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু প্রতিষ্ঠানে এই দুটি বিষয়ের সমন্বিত (কম্বাইন্ড) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ফলে চাকরির ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে বিভ্রান্তি ও বঞ্চনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বাকৃবির শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এ বিষয়ে দ্রুত নীতিগত সমাধান না হলে একাডেমিক ও পেশাগত দুই পর্যায়েই পশুপালন শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবেন।