শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৩

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (রবিবার, ৬ জুলাই)। দীর্ঘ ৭১ বছরের পথ চলায় নিজস্ব আলোয় আলোকিত এই বিদ্যাপীঠ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গৌরব ও ঐতিহ্য বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পরিসর। ১৯৫৩ সালে রোপণ করা বীজটি বর্তমানে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

শহিদ ড. শামসুজ্জোহার স্মৃতিবিজড়িত দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠের রয়েছে গৌরব-ঐতিহ্যের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। এই কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শ্রেণি চালু করা হলেও কিছু দিন পরেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখনই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯৪৭ সালের দিকে রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়।

১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। এভাবে একের পর এক আন্দোলনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ম হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ।

অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাশ হয়। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইতরাত্ হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এর পর রাজশাহী কলেজে শুরু হয় রাবির পথচলা।

বর্তমানে ৩০৩ দশমিক ৮০ হেক্টর আয়তনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রায় ১১০০ শিক্ষক ও ২০০০ প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার (বিদেশি শিক্ষার্থীসহ)। এর প্রায় অর্ধেক ছাত্রী। বর্তমানে ১২ অনুষদের অধীনে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। বেড়েছে অবকাঠামো সুবিধা। ১২টি একাডেমিক ভবনসহ বর্তমানে রাবির ছাত্রদের থাকার জন্য আবাসিক হল রয়েছে মোট ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ছয়টি। এছাড়া গবেষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ডরমেটরি।

সুদীর্ঘ সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিয়ে অনেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে রাবি তৈরি করেছে ভাষা বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, তাত্ত্বিক ও সমালোচক বদরুদ্দীন উমর, চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম, নাট্যকার মলয় ভৌমিক, মাসুম রেজা ও ক্রিকেটার আল আমিন হোসেনদের মতো অসংখ্য গুণীজনকে।

দিবসটি উপলক্ষে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রাক্তন সব শিক্ষার্থী, গবেষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আকতার হোসেন মজুমদার জানান, ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে আছে—সকাল ১০:০৫ মিনিটে প্রশাসন ভবন-১-এর সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন; সকাল ১০:২৫ মিনিটে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা অবমুক্তকরণের মাধ্যমে উদ্বোধন, ১০:৩০ মিনিটে শোভাযাত্রা এবং ১১টায় বৃক্ষরোপণ। বেলা ১১:৩০ মিনিটে সিনেট ভবনে আলোচনাসভা। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর চৌধুরী রফিকুল আবরার। রাবি উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এ কে এম আজহারুল ইসলাম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। এছাড়া বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে খেলাধুলা।

ইত্তেফাক/এমএএম