বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান পেলেন সেই গিয়াস

আপডেট : ২৮ জুন ২০২০, ১৯:০২

দেশের আলোচিত দুরারোগ্য ব্যাধি মাস্কুলার ডিস্ট্রফি (Muscular Dystrophy)তে আক্রান্ত গিয়াস উদ্দিনের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ত্রাণ ও চিকিৎসা তহবিলের ৫০ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম রাসেল আজ রবিবার সকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই চেক হস্তান্তর করেন। 

গিয়াস উদ্দিন গত বছর যাবৎ এই রোগে আক্রান্ত হয়। দেশে মাত্র কয়েকজন রুগীই আছেন যারা এই রোগে আক্রান্ত, মূলত সারা পৃথিবীতেও এই রুগীর সংখ্যা খুবই কম। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। গত বছর তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা রাসেলের দৃষ্টি গোচর হলে তিনি সে সময়ই চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করান ও ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট চির কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা রাসেল ভাইকে ধন্যবাদ জানাই, সময় আমার চিকিৎসার খোঁজ খবর ও বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা করার জন্য। আপনারা আমার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।’

‘ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ একটি বিরল রোগ। রোগটি জিনগত, তবে সংক্রামক নয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়, মাংসপেশি জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যায়। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পঙ্গু হয়ে যায় রোগী। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশিদিন বাঁচে না, আর রোগটি নিরাময়যোগ্যও নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এসব তথ্য।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম আলমগীর বলেন, ‘ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ আক্রান্ত রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয় না, এ রোগে আক্রান্তদের মাসল (মাংসপেশি) গ্রো করে না। যে কারণে একেক সময় শরীরের একেকটা অঙ্গ দুর্বল হতে শুরু করে। মাংশপেশি ডিসট্রফি হয়, পায়ে হলে হাঁটতে পারে না, শক্ত হয়ে যায়, হাতে হলে কিছু ধরতে পারে না।’

এই রোগে আক্রান্তদের আরও বেশ কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে এসএম আলমগীর বলেন, ‘এসব রোগী কোনও কাজ করতে পারে না বলে এক ধরনের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন। দেখা গেছে, কোনও পুরুষ এতে আক্রান্ত হলে তার সন্তানদের শরীরেও এই রোগ দেখা দেয়। এটি সম্ভবত বংশগত রোগ। আমরা এর রুট বের করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।’

এসব রোগীর বেশিরভাগই অপুষ্টিতে ভুগছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তাদের পুষ্টি খুব দরকার। এই বিরল রোগ নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া দরকার। এই রোগের প্রতিষেধক কিংবা কিভাবে এদের সুস্থ করে তোলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।’

রোগটি যে নিরাময়যোগ্য নয়, তা জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহও। তিনি বলেন, ‘এই রোগ একেবারেই কিউরেবল (নিরাময়যোগ্য) না। চিকিৎসা করলে হয়তো একটু আরাম হয়, কিন্তু এই রোগ সেরে যায় না। মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দরকার হয়, কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় না।’

ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘মাংসপেশিদুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে রোগী একসময় প্যারালাইজড হয়ে যায়, তারপর মৃত্যু হয়। এরা সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ বছর বাঁচতে পারে। রোগটি নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত, রোগের ওষুধ নিয়েও ভাবা দরকার।’

ইত্তেফাক/কেকে