শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভিপি নুরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে একই ছাত্রীর আরেক মামলা

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:৫০

অপহরণ, ধর্ষণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্র হননের অভিযোগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন এক ছাত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ঐ ছাত্রী এর আগে লালবাগ থানায় ধর্ষণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছিলেন। ঐ মামলার পর পুলিশ নুরকে আটক করলেও ছেড়ে দেয়। এদিকে এই মামলাকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্র অধিকার সংগ্রাম পরিষদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এই মামলায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, লালবাগ থানায় যে শিক্ষার্থী মামলা করেছিলেন, কোতোয়ালি থানার মামলাটি তিনিই করেছেন। তবে ঘটনা দুটি ভিন্ন। তিনি বলেন, কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা এবং পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্র হননের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগকে (২৮) এ মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে করা হয়েছে মামলার ২ নম্বর আসামি, যাকে লালবাগের মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর লালবাগের মতো কোতোয়ালির মামলায়ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নাম এসেছে আসামির তালিকার ৩ নম্বরে। নুরও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক। অন্য তিন আসামি হলেন পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইফুল ইসলাম (২৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি নাজমুল হুদা (২৫) এবং কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ হিল বাকি (২৩)।

লালবাগ থানায় মামলার এজাহারে বাদী বলেছেন, একই বিভাগে পড়া এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কাজে থাকার কারণে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। এর সুযোগ নিয়ে মামুন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। আর কোতোয়ালি থানার মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনার পর ঐ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সোহাগ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সুস্থ হওয়ার পর মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন ঐ তরুণী। তখন সোহাগ তাকে ‘সহযোগিতার আশ্বাস’ দেন এবং মামুনের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে সদরঘাট হয়ে লঞ্চে করে চাঁদপুরে নিয়ে যান। কিন্তু চাঁদপুরে মামুনকে না পেয়ে ঐ ছাত্রীর সন্দেহ হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে লঞ্চে সোহাগ তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এজাহারে আরো বলা হয়েছে, এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ঐ তরুণী নুরের সঙ্গে দেখা করেন। নুর তাকে প্রথমে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানী করার’ হুমকি দেন। এরই মধ্যে মামলার বাকি তিন আসামি নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঐ তরুণীর বিরুদ্ধে ‘কুত্সা’ রটাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। লালবাগ থানায় ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর তা ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে সোমবার রাতে বিক্ষোভ করছিল নুরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পুলিশ সেখান থেকে নুর ও তার সাত সহযোগীকে ধরে নিয়ে গেলেও পরে ছেড়ে দেয়। এ সময় নুরসহ অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী কিছু ব্যক্তির নির্যাতনে আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

এদিকে নুরের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাকে ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ। দাবি আদায়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব ও জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তারা। সমাবেশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, হামলা-মামলা করে তাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না। পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সরকার যদি তাদের দমন করে ফেলে, তাহলে এ দেশে আর কেউ কখনো প্রতিবাদ করতে পারবে না।

তরুণীর দায়ের করা মামলায় আইন অনুযায়ী নুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নুরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার প্রতিবেদন ১৩ অক্টোবর

কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নারী নির্যাতন দমন আইনে নুরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৩ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছে আদালত। গতকাল বিকেলে মামলার এজাহার আদালতে এলে তা গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মাহমুদা আক্তার। এরপর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) নুর আলমকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

ইত্তেফাক/এসি