শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘জামিন জালিয়াতি থেকে সুপ্রিম কোর্টকে রক্ষা করতে হবে’

আপডেট : ২২ মে ২০১৯, ২০:১৮

হাইকোর্ট বলেছে, সুপ্রিম কোর্টে জামিন জালিয়াতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে কিছু অসাধু আইনজীবী জড়িত। জামিন জালিয়াতির হাত থেকে এই কোর্টকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আইনজীবীসহ আমাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। 

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এই মন্তব্য করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম আমিনউদ্দিন বলেন, জামিন জালিয়াতির বিরুদ্ধে আদালতকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতা করব। 

মাগুরার একটি জোড়া খুনের মামলার আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন জাল নথি দিয়ে হাইকোর্ট থেকে গত ১৭ এপ্রিল জামিন নেন। বিষয়টি নজরে আসায় হাইকোর্ট আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য মাগুরার পুলিশ সুপার ও সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়। 

বুধবার সদর থানার ওসি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজলকে জানান যে, আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তখন এ তথ্য আদালতে তুলে ধরেন ডিএজি। এরপরই হাইকোর্ট আসামি মোয়াজ্জেমের জামিন বাতিল করে দেয়। পাশাপাশি মোয়াজ্জেম ও মামলার তদবিরকারক মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী জাফর আলী খানকে জালিয়াতির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে আদালত। আগামী ১৯ জুন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। 

আরো পড়ুন: শুরুতেই অব্যবস্থাপনা, অ্যাপেও মিলছে না কাঙ্খিত টিকিট

জানা যায়, ১৯৯৪ সালে মাগুরায় আসাদুজ্জামান ও হান্নান নামে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় পরের বছর আসামি মোয়াজ্জেমসহ কয়েকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পলাতক আসামি মোয়াজ্জেম ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। এরপরই সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে ওই বছরই আপিল করেন। চান জামিনও। আপিল নম্বর ৯৩৩১/২০১৭। ওই আপিলের ওপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। জামিন না পাওয়ায় ওই আসামি মিথ্যা তথ্য ও মামলার সকল নথি জাল করে হাইকোর্টে আরেকটি ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। যার নম্বর ১০৮৪/২০১৯। এই আপিলে আসামি জামিনও চান। 

গত ১৭ এপ্রিল হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ওই আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জামিন মঞ্জুর করে। জামিন পেয়ে আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ অবস্থায় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জামিন পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন ডিএজি জাহিদ সারওয়ার কাজল। তিনি দুটি আপিলের নথি পর্যালোচনা করেন। 

নথি পর্যালোচনায় দেখতে পান যে, ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ জোড়া খুনের মামলায় মোয়াজ্জেমকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়। কিন্তু এই রায় প্রদানের তারিখ বদলে জাল নথি দাখিল করেছেন আসামি। সেখানে বলা হয়েছে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর তাকে দণ্ড দিয়েছে দায়রা আদালত। এছাড়া মামলার এজাহার, সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখও পাল্টে দেয়া হয়েছে এই আপিলে। এভাবে মিথ্য তথ্য প্রদান ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। 

ইত্তেফাক/এমআই