বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৯২ হাজার কোটি টাকা

আপডেট : ০২ জুন ২০২০, ০৬:০৬

করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রপ্তানি একপ্রকার থেমে গেছে বলা যায়। প্রায় একই অবস্থা আমাদের দেশেও। আগে থেকেই যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছিল তা আরো প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। অর্থবছরের শেষ চার মাসে অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে প্রথমে চীনে এবং পরবর্তীতে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। আর এতে লকডাউনে পড়ে গোটা বিশ্বে বাণিজ্যিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ফেব্রুয়ারির পরে ব্যাপকহারে কমেছে। অন্যদিকে কমে গেছে রেমিট্যান্সের পরিমাণও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ৫৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসেবে ফেব্রুয়ারির শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ।

দেশের অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানির জন্য বিকল্প বাজার ও পণ্যের বহুমুখীকরণ করা দরকার বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অন্য দেশের মুদ্রার সঙ্গে দেশীয় মুদ্রার মান ভালো অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দামও কমছে। এসব ইতিবাচক বিষয়গুলো মাথায় রেখে আর্থিক নীতি ঠিক করতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান আর্থিক সংকট কাটাতে বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াতে হবে। এজন্য যেসব দেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। আর আমাদের বৈদেশিক ব্যবসার ক্ষেত্রে পশ্চিমা নির্ভরতা কমিয়ে অন্যদিকে এর প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ না নিলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামবে।

বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকি সেটার একটা বড়ো অংশ আমদানি করতে হয়। ফলে রপ্তানির ওপর আমদানিও নির্ভর করে থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে কিছুটা কৌশলী হতে হবে। এখন অপ্রয়োজনীয়, বিলাসী ও ভোগ্যপণ্য আমদানি কমাতে হবে। অপরদিকে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। এজন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি না সেটাও খুঁজে বের করতে হবে।

দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় পুরোটাই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। করোনার কারণে এ বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কমে অর্ধেকে নেমে গেছে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে বন্দর দিয়ে প্রায় ২ লাখ কন্টেইনার আমদানি হয়, যা চলতি বছরের এপ্রিলে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। অন্যদিকে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানিও কমেছে ৭০ শতাংশেরও বেশি, যা গত ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত এপ্রিলে এ বন্দর দিয়ে মাত্র ১৪ হাজার ৭৪৪ কন্টেইনার পণ্য রপ্তানি হয়।

ইত্তেফাক/এমআর