শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অকেজো ১২ উড়োজাহাজ এখন গলার কাঁটা

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ১০:১৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অকেজো ১২টি উড়োজাহাজ এখন বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘গলার কাঁটা’য় পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে ও রানওয়েতে ফেলে রাখা এসব উড়োজাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু উড়োজাহাজগুলো বন্দর এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়নি। সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। 

আরও পড়ুন: বিমানের আয়ের ৩০০ কোটি টাকা লোপাট, অনুসন্ধানে দুদক

উড়োজাহাজগুলো কার্গো ভিলেজের সামনে ও রানওয়ে থেকে সরিয়ে উত্তর দিকে অবস্থিত বে-তে রাখা হলেও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজগুলোকে পার্কিংয়ের জায়গা দিতে সংকটে পড়তে হচ্ছে। বিমানবন্দরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমদানি-রপ্তানি পণ্য ওঠানামায় কার্গো বিমানগুলোকে জায়গা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে সিভিল এভিয়েশনকে। এছাড়া বর্তমানে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই কাজে সমস্যা হচ্ছে। ফলে এখন সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আগামী জুনের মধ্যে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলাম কিংবা বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এসব এয়ারলাইনসের কাছে হ্যান্ডেলিং চার্জ হিসেবে কয়েক শ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। এই পাওনা আদায় অনিশ্চিত হয়ে গেছে। নিলামে বিক্রি করে সেখান থেকে কিছু টাকা পাবে বেবিচক।

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, এখন পরিত্যক্ত বিমানগুলো কার্গো পার্ক ও রানওয়ে থেকে পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ বিমানগুলো যে স্থানে রাখা ছিল সেখানে আমাদের কর্মকাণ্ডে সমস্যা হচ্ছিল। রপ্তানি পণ্য নিতে আসা বিদেশি বিমানগুলোকে আমরা জায়গা দিতে পারতাম না। এই পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো আমরা আগামী জুনের মধ্যেই নিলাম বা বাজেয়াপ্ত করে বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে ফেলব।

আরও পড়ুন:  বিমান যাত্রায় আর কোন বিধিনিষেধ থাকছে না

মফিদুর রহমান বলেন, প্রত্যেকটি বিমানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে। এখন যে কোনো সময় আমরা নিলামে তুলতে পারি বা স্ক্র্যাব হিসেবে ধ্বংস করে ফেলতে পারি। বিমানগুলো নিলামে তুললে টাকাটা সরাসরি আমাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। তাদের কাছে আমরা বহু টাকা পাব।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে ১২টি বিমান রাখা ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এ কারণে কার্গো ভিলেজের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এতে কার্গো ভিলেজের খালি জায়গা বেড়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বেবিচক কর্তৃপক্ষকে নিলাম ও ক্রোকের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন বাকিটা তাদের ওপর নির্ভর করছে।

পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, জিএমজি এয়ারলাইনসের একটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুইটি, অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ। বেবিচক সূত্র জানায়, দুই থেকে ১০ বছর পর্যন্ত এগুলো পড়ে আছে বিমানবন্দরে। ফলে ভাড়া বাবদ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা পাওনা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনো ঘোষণা না দিয়েই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ার। ২০০৫ সালে বেবিচকের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছিল এ এয়ারলাইনসটি। বেবিচক দেশের বিমানবন্দরগুলো থেকে এয়ারলাইনসটির বিমান সরানোর জন্য একাধিকবার নোটিশ করলেও কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি এয়ারলাইনসটি। 

এছাড়া মধ্য ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টে এয়ারলাইনসটির একটি বিমান দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর সরানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় ২০১৮ সালের আগস্টে সেটিকে রানওয়ের পার্কিংলট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায় জিএমজি এয়ারলাইনস। এই এয়ারলাইনসটি বিমানবন্দর থেকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণ দেখিয়ে সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। যদিও দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়ায় এয়ারলাইনসটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। রিজেন্ট এয়ারওয়েজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর। বেবিচক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্রেতা পাওয়া না গেলে কেজিদরে বিক্রি করা হবে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ।

ইত্তেফাক/জেডএইচ