বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিস্ময়কর বিপন্ন প্রাণী বনরুই

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২১, ০৯:২১

বনরুইকে বলা হয় আঁঁশযুক্ত পিঁপড়াভোজী প্রাণী। ফোলিডোটা বর্গের যে আট প্রজাতির বর্ম-ঢাকা, দন্তহীন স্তন্যপায়ীর অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে রয়েছে বনরুই তার একটি। বনরুইয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ পাঙ্গোলিন্স। মালয় ভাষায় যার অর্থ দাঁড়ায় ঘূর্ণায়মান বস্তু যা আত্মরক্ষার সময় প্রাণীটি নিজেকে বলের মতো কুঁকড়ে ফেলার অভ্যাসকে ইঙ্গিত করে। একটি পূর্ণবয়স্ক বনরুই লম্বায় সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার (১-৩ ফুট) এবং ৫ থেকে ২৭ কেজি (১০-৬০ পাউন্ড) ওজনের হয়। আর এদের লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার (প্রায় ১০-২৮ ইঞ্চি) অবধি হয়ে থাকে। মুখের দিক এবং শরীরের নীচের অংশ বাদে এদের সমস্ত শরীর সিমেন্টযুক্ত এক ধরনের চুলের সমন্বয়ে বাদামী আঁঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত। নাক সরু ও চোখা। জিভ লম্বা ও আঠালো যা ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি) পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। নাকের মতো এদের চোখ ও কানও সরু। আশ্চর্যজনকভাবে বনরুইয়ের সামনের নখর পেছনের নখরের তুলনায় দ্বিগুণ লম্বা।

মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বনরুই?

কিছু বনরুই যেমন আফ্রিকান কালো-পেটযুক্ত ম্যানিস লংগাইডাটা ও চীনা এম. পেন্টাড্যাকটায়লা বৃক্ষবাসী এবং আফ্রিকার বৃহদাকার স্থলচর বনরুই এম. জিগান্তেয়াকে স্থলচর হিসেবে দেখা যায়। বাকি বনরুইদের সকলেই নিশাচর। দিনের বেলায় যেমন গর্তে বাস করে। একইভাবে এরা কিছুটা সাঁতার কাটতে সক্ষম। উইপোকা বনরুইয়ের প্রিয় খাবার হলেও পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড়ও এরা ভক্ষণ করে। গন্ধ শুকে শিকার সনাক্ত করা এই প্রাণীটির সহজাত স্বভাব।

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষার মাধ্যম হিসেবে মলদ্বার গ্রন্থি থেকে এক ধরনের তরল দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ নিঃসরণ করার পাশাপাশি শরীরকে কুঁকড়ে গোলাকার বলের মতো আকৃতি করে গড়িয়ে চলার প্রবণতা এদের মধ্যে লক্ষ্যণীয়, যা শিকারীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সাধারণত প্রাণী হিসেবে বনরুই খুবই ভীতু স্বভাবের। এরা একা বা জোড়ায় বাস করে। বেশিরভাগ প্রজাতিতে প্রতি প্রসবে কেবলমাত্র একটি যুবক জন্মগ্রহণ করে, তবে কিছু এশিয়ান প্রজাতিতে দুটি বা তিনটি পুরুষ সন্তান জন্ম নেওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। জন্মের সময় অল্প বয়স্ক বনরুইয়ের দেহাবরণ অত্যন্ত নরম থাকে এবং কিছু সময়ের জন্য মা বনরুইয়ের পিঠে চালিত হয়। যদিও এদের গড় আয়ু নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে বন্দী অবস্থায় পর্যবেক্ষণকালে ২০ বছর পর্যন্ত এদের বাঁচতে দেখা গেছে।

 Chinese pangolin is seen on meadow at Zijinshan area on July 13, 2007 in Nanjing, Jiangsu Province of China.

বনরুইয়ের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, ত্বক ও আঁঁশ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ওষুধ তৈরির অন্যতম কাঁচামাল এবং অত্যধিক মূল্যবান হওয়ায় এদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ফলস্বরূপ, এদের সংখ্যা এত নিচে নেমে গেছে যে, একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেই এরা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পরিণত হয়। ২০১৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) চারটি প্রজাতিকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ভারতীয় এম. র্ক্যাসিকাডাটা ও ফিলিপাইনের এম. কুলিয়েনসিস্তকে বিপন্ন এবং সুন্দার এম.জাভানিকা ও চীনা একটি প্রজাতিকে অতি বিপন্ন হিসাবে দেখানো হয়েছে।

ইত্তেফাক/কেকে