শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এখনো অনলাইনে সক্রিয় জঙ্গিরা!

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২০, ০২:১৫

২০১৬ সালের পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস সমর্থিত নব্য জেএমবির হামলায় প্রাণ হারান দেশি-বিদেশি ২৩ জন মানুষ। আহত হন আরো অনেকে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে হামলাকারী নব্য জেএমবির অনেকেই নিহত হন। অনেকে গ্রেফতার হন। ইতিমধ্যে হামলাকারী সাত জঙ্গির ফাঁসির রায় হয়েছে। তারপরও থেমে নেই জঙ্গি কর্মকাণ্ড। ভিন্ন ভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরীর ও আনসার আল ইসলাম অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে আল-কায়েদা ইন সাবকনটিনেন্ট (একিউআইএস) নামের জঙ্গি সংগঠনটি অনলাইনে বিবৃতি দিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়।

পুলিশ ও জঙ্গি বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে জঙ্গিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইনের বিভিন্ন চ্যানেলে প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে সদস্য সংগ্রহের পর বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে হামলার প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আগে ফিজিক্যালি বিভিন্ন দুর্গম এলাকা যেমন চর ও পার্বত্য এলাকায় প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও এখন তারা ডিজিটাল প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। সেখানে হামলা থেকে শুরু করে আত্মরক্ষার নানা কৌশল শেখানো হচ্ছে। আবার হিযবুত তাহরীর তাদের অবস্থান জানান দিতে মাঝেমধ্যেই লিফলেট প্রচার করছে। সম্প্রতি লিফলেটসহ বেশ কয়েক জন হিযবুত তাহরীর সদস্য গ্রেফতার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতায় জঙ্গি কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে পড়লেও স্বস্তি প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। সাময়িক বিরতি দিয়ে তারা আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আরও পড়ুন: পানির মধ্যে ওজু করে দোয়া-দরুদ পড়েছি

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেশে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ বিস্তারের পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। ঐ হত্যাকাণ্ডের পরপরই দেশে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। যার কারণে দেশে জঙ্গিদের মতাদর্শ প্রচারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর দেশের অভ্যন্তরে তাদের কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেনি। এজন্য কোনো কোনো জঙ্গি নেতা তার অনুসারীকে ‘লোন উলফ’ হামলার নির্দেশনা দিচ্ছেন।

সেদিন যা ঘটেছিল : সেদিন হলি আর্টিজানে দেশি-বিদেশি অতিথিদের অনেকেই আড্ডা দিচ্ছিলেন বিভিন্ন টেবিল ঘিরে। রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল যুবক হাতে পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে। তারা বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করে গুলি শুরু করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর বোমা নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে তারাও পালটা গুলি চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের নিক্ষিপ্ত গুলি ও গ্রেনেডে সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালেহ উদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে ২ জুলাই সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অপারেশন থান্ডার বোল্ড নামে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে ছয় জন নিহত হন। এরা হলেন মীর সামহ মোবাশ্বের (১৯), রোহান ইমতিয়াজ (২০), নিরবাস ইসলাম (২০), খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২), শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ (২৬) ও সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। পরবর্তী সময়ে তদন্তে জানা যায়, নিহত সাইফুল ইসলাম হলি আর্টিজানের শেফ ছিলেন। জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কমান্ডোরা ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। জিম্মি থাকাবস্থায় সন্ত্রাসী হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হওয়া ৯ জন ইতালিয়ান, সাত জন জাপানিজ, এক জন ভারতীয় এবং তিন জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন নিহত হন।

ইত্তেফাক/এসি