বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার দাবি সাংবাদিকদেরই: তথ্যমন্ত্রী

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১৯

গণমাধ্যমে শৃ্ঙ্খলা আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সাংবাদিকরাই গণমাধ্যমের নানা বিশৃঙ্খলা দূর করে শৃঙ্খলা আনার দাবি জানিয়েছেন। আমি সাংবাদিকদের একজন হয়ে সেই চোখ দিয়ে বিষয়গুলোগুলো দেখি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিশৃঙ্খলা দূর করার চেষ্টা করি।  

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর ক্রম নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা ছিল, কেবল অপারেটরদের কাছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ধর্ণা দিতে হতো। এখন সম্প্রচার শুরুর তারিখ অনুযায়ী চ্যানেলগুলো দেখানো হয়। পয়লা অক্টোবর থেকে বিদেশি চ্যানেলগুলো যেন অনুমতি ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপন দেখাতে না পারে, সেজন্য আমরা দেশে প্রচলিত আইন কার্যকর করতে যাচ্ছি। আমি সেটি ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকেও জানিয়েছি। কারণ ভারতের প্রচুর চ্যানেল এখানে প্রদর্শিত হয়, যেগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, যেটি আইন বহির্ভূত। আইপি টিভি’র ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছি, রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কাজ শিগগিরই শুরু হবে।’ 

সংবাদপত্র প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানেও নানা অনিয়ম বিশৃঙ্খলা আছে। ডিএফপিতে পত্রিকার যে প্রচার সংখ্যা, সেটি যুগ যুগ ধরে একটি অবাস্তব সংখ্যা। অনেক সেটিকে ভৌতিক প্রচার সংখ্যা বলেন। পত্রিকা বের হয় তিন হাজার কিন্তু প্রচার সংখ্যা এক লাখ, পত্রিকা বের হয় পাঁচ হাজার প্রচার সংখ্যা দুই লাখ। আমরা সেখানেও একটি শৃঙ্খলা আনবো। চারশ’ পত্রিকা গত দুই বছরে একটি সংখ্যাও ডিএফপিতে জমা দেয়নি।’

তথ্যমন্ত্রী জানান, ‘ইতোমধ্যেই ১২০টির মতো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে, কারণ এই পত্রিকাগুলো বের হয় না কিন্তু বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করে যেদিন বিজ্ঞাপন পায়, সেদিন ছাপায়। আর এতে করে যে পত্রিকাগুলো সত্যিকারের অর্থে প্রকাশিত হয়, তারা বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হয়। বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হওয়ার কারণে সেই পত্রিকার সাংবাদিকরা বেতন থেকে বঞ্চিত হয়। সাংবাদিকরা দাবি জানিয়েছেন সেখানে শৃঙ্খলা আনার জন্য, সেই দাবি আমাকে সাহস জুগিয়েছে, আমি সেখানে শৃঙ্খলা আনবো।’
 
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানসিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিট থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, আমিও পত্রিকা দেখে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সরকার অবশ্যই যেকোনো কারণে হিসাব তলব করতে পারে, ব্যাংক হিসাবও তলব করতে পারে। তবে আমি মনে করি এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তাদের আমি চিনি ও জানি। তাদের অনেকের আর্থিক অবস্থাও আমি জ্ঞাত।’ 

এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এটি দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বব্যাপী এ ধরনের আইন আছে, আরও কঠিন আইন আছে। একজন সাংবাদিকের বা একজন গৃহিনীর বা যে কারোর চরিত্র ডিজিটাল মাধ্যমে হনন করা হলে তিনি এই আইনে প্রতিকার পাবেন। সেজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন। একইসঙ্গে এই আইন যেন সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধক না হয়, সেটি দেখতে হবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে আমার স্বাধীনতা যেন অপরের স্বাধীনতা ক্ষুণœ না করে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা আছে, অনেক উন্নয়নশীল দেশেও এরকম স্বাধীনতা নেই। দুর্নীতি, অনাচার প্রতিরোধে, সমাজে শৃঙ্খলা আনতে, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়ার জন্য, অবহেলিত ব্যক্তির প্রতি সমাজ, রাষ্ট্র, সরকারের দৃষ্টিপাতের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ এখনও সমগুরুত্বে প্রকাশ হয় না।’

ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) মোল্লা জালাল,  জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বক্তব্য রাখেন।  ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সভাটি পরিচালনা করেন। 

/ইত্তেফাক/এনই/