শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়নমুখী ভূমিকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সহজতর হয়েছে’

আপডেট : ১৪ মে ২০১৯, ১৮:৩৫

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান মনে করেন বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়নমুখী ভূমিকার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যাপক অর্থায়ন হয়েছে এবং ফল স্বরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রক্রিয়া গতিশীল হয়েছে। 

এছাড়াও তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভাবনীয় প্রবৃদ্ধির জোয়ারের পেছনে কাজ করেছে তৈরি পোশাক নির্ভর রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি, এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। আর এক্ষেত্রে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত এক দশকের বেশি সময়ে যে ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এবং জাতীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উন্নয়নমুখী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।’ 

সোমবার (১৩ মে) যুক্তরাজ্যে সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত ‘ইকোনমিক গ্রোথ, ডেভেলপমেন্ট এন্ড ইকোনমিক সাসটেইনেবিলিটি’ শীর্ষক দিনব্যাপী সিম্পোজিয়ামে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন। সিম্পোজিয়ামে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ব্ল্যাকাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, এবং অধ্যাপক সেলিম রায়হান। অধ্যাপক ব্ল্যাকাবি তাঁর বক্তব্যে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে সরকারকে নীতি সহায়তা করার ওপর জোর দেন এবং ড. আতিউর তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। 

ড. আতিউর তাঁর নিবন্ধে গত এক দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে যে সমস্ত উদ্যোগ নিয়েছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, কৃষি খাতে অর্থায়ন, এসএমই উদ্যোগ উৎসাহিতকরণ, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা, এবং সবুজ অর্থনীতির বিকাশে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ মনযোগ দিয়েছে। ফলে দেশের বাজারে চাহিদা বেড়েছে এবং তার ইতিবাচক প্রভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বেড়েছে। তবে এসব প্রশংসনীয় অর্জনের পাশাপাশি আগামীতে নন-পারফর্মিং লোন বৃদ্ধি, তারল্য সংকট, সুশাসনের অভাব, অপরিণত ক্যাপিটাল মার্কেট ও বীমা খাত, এবং সর্বোপরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক স্বাধীন তদারকি নিশ্চিতকরণের মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য এখনই বিশেষ মনযোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. আতিউর।

আরো পড়ুন: ইগলু আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে অভিযান, ৫ লাখ টাকা জরিমানা

তবে, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজিকরণের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশ কিছু প্রশংসনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. আতিউর। যেমন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ ও বিনিয়োগ নিবন্ধন সেবার মান বাড়াতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফল স্বরূপ ২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের কয়েক বছরে ছিলো মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে।

সবশেষে ড. আতিউর বলেন যে, ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো এসেছে তা ধরে রাখা সম্ভব হবে যদি সরকার সুশাসন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে, সমাজের উঁচু তলায় থাকা নীতি নির্ধাকরদের সাথে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কার্যকর বোঝাপড়া নিশ্চিত করা গেলে তৈরি পোশাক এবং খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খুবই সম্ভব। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যকর অংশগ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রাখা সম্ভব।

ইত্তেফাক/এমআই