মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আইন মানছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৯, ০২:১০

আইন না মানলেও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের শর্ত না মানলে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু সেই শর্ত না মানা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনও পাচ্ছে। অনুমোদন পাচ্ছে সমাবর্তনেরও। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ ও সেগুলোকে নিয়ম শৃঙ্খলায় আনতে ২০১০ সালে নতুন আইন করে সরকার। কিন্তু আইন প্রণয়ন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইন মানানোর ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই শিক্ষামন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের।

২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পূর্বে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১০ সাল থেকেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে একাধিকবার সময় বেধে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় বেধে দিয়েছিল শিক্ষামন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপর আর সময় বাড়ানো হয়নি। ফলে ২০১৭ সাল থেকেই ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের লঙ্ঘন। অন্যদিকে ২০১২ সালে অনুমোদন পায় ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার ৭ বছর শেষ হয়েছে। আইন অনুযায়ী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও কেউ সনদ নবায়ন করেনি। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আরও পড়ুন: ঈদুল আযহার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২৯ জুলাই

দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ অনুমোদন পায় ১৯৯৬ সালের ১৬ মে। প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অনুমোদন পায় ২০০০ সালের ২১ মার্চ। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আর কতদিন লাগবে তা জানাতে পারেনি ইউজিসি। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অনুমোদন পায় ২০০১ সালের ১৩ মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকলেও সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। আর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ অনুমোদন পায় ২০০১ সালের ৫ ডিসেম্বর। ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি কিনলেও এখনো ভবনের কাজ শুরু হয়নি। এসব বিষয়ে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে ইউজিসি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অনুমোদন পায় ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিও আশুলিয়ায় নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করলেও সেখানে পুরোপুুুরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। ইউজিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিগগিরই এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবে বলে সূত্র জানিয়েছে। চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ২০০১ সালের ৫ ডিসেম্বর অনুমোদন পায়। ইউজিসির তথ্য, এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ থাকা বাধ্যতামূলক। তথ্য অনুযায়ী, ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। উপ-উপাচার্য নেই ৭২টিতে। আর কোষাধ্যক্ষ নেই ৫৩টিতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকা আইনের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আইন অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। কিন্তু দেখা যায়, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষকের চেয়ে বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ শতাংশকে (৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং বাকি ৩ শতাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের) বিনা বেতনে পড়ানোর কথা থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম মানে না। এ ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনকে দরিদ্র দেখিয়ে বিনামূল্যে পড়ানো হয়।

শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন কাঠামো ইউজিসিকে অবহিত করার কথা থাকলেও তা করে না অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক হিসাব নিকাশের অডিট রিপোর্ট প্রতিবছর ইউজিসিতে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তা জমা দেয় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী লোকজন। এ কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিব্রত হন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনের আওতায় আনতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি বলে মনে করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেন তালুকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে সর্বশেষ কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কেউ কেউ স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। কেউ কেউ যায়নি।