বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চীনকে নজরে রাখতে বাংলাদেশ উপকূলে রাডার বসাবে ভারত

আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০১:৫৯

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গত ৫ অক্টোবর যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে তার অন্যতম হল যৌথভাবে একটি ‘কোস্টাল সার্ভেল্যান্স’ বা উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা। জানা গেছে, এমওইউ অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারত ২০টি আধুনিক রাডার সিস্টেম বসাতে সাহায্য করবে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে ‘মেরিটাইম সিকিউরিটি’ বা সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে।

বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে যে মোট সাতটি সমঝোতা স্মারক হস্তান্তর হয়েছে তার মধ্যে সপ্তম তথা শেষটি ছিল এই কোস্টাল সার্ভেল্যান্স সংক্রান্ত। এই দলিলটির শিরোনাম ছিল বাংলাদেশকে ‘একটি উপকূলীয় নজরদারি সিস্টেম প্রদানের জন্য এমওইউ’ বা সমঝোতাপত্র। সমুদ্রপথে কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলার চেষ্টা হলে- যেমনটা এক দশক আগে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইতে হয়েছিল- তার আগাম খবর পেয়ে যাওয়া সম্ভব এই ধরনের সিস্টেমের সাহায্যে। এমওইউ’তে সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামালউদ্দিন আর ভারতের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ।

ভারতের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি হবে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলে ভারত যে ধরনের রাডার সিস্টেম বসানোর কাজ করবে, প্রায় একই ধরনের সিস্টেম ভারত এর আগে মরিশাস, সেশেলস, মালদ্বীপের মতো ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে বসিয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার উপকূলেও ভারতের পক্ষ থেকে একই ধরনের রাডার সিস্টেম বসানোর কথা-বার্তা চলছে। এই ধরনের সমঝোতা আগামী দিনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ‘হোয়াইট শিপিং অ্যাগ্রিমেন্ট’ তৈরির পথ প্রশস্ত করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে এই ধরনের চুক্তি থাকলে তাদের নৌবাহিনী পরস্পরের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর চলাচল নিয়ে যাবতীয় তথ্য আগেভাগেই নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করে থাকে।

গত বছর ভারতের দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক খবরে বলা হয়, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ওপর নজর রাখতে ভিয়েতনামে একটি স্যাটেলাইট মনিটরিং স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। দক্ষিণ হো চি মিন সিটিতে একটি ‘ডাটা রিসেপশন অ্যান্ড ট্রাকিং অ্যান্ড টেলিমেট্রি স্টেশন স্থাপন করেছে। শিগিগরই ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন এটি সচল করবে।

উপকূলে নজরদারির আসল লক্ষ্য চীন

ভারত কেন এই আধুনিক রাডার ব্যবস্থা বাংলাদেশের উপকূলে বসাতে আগ্রহী সে বিষয়ে কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন বিভাগের ড. সৈয়দ মাহ্?মুদ আলী বিবিসিকে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশ যা-ই বলুক না কেন দিল্লির সরকার ভারত সাগরের বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্রে যে অত্যাধুনিক নজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তুলছে তার আসল উদ্দেশ্য চীনের নৌবাহিনীর গতিবিধির দিকে নজর রাখা। তিনি বলেন, চীন সম্পর্কে ভারতের যে উত্কণ্ঠা রয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা কিছুটা নিষ্ক্রিয় করতেই ভারত সরকার অবশ্যই চাইবে এটা প্রমাণ করতে যে, বাংলাদেশের ওপর তাদেরও কিছুটা হলেও প্রভাব রয়েছে। এ ধরনের একটি রাডার ব্যবস্থা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে স্থাপন করলে সেটাই প্রমাণিত হবে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ১৯৭৬ সাল থেকে চীনের সাথে ক্রমেই বেশ ঘনিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

আরও পড়ুনঃ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে আবরার ঘটনায় জড়িতদের: আখাউড়ায় আইনমন্ত্রী

এই সম্পর্ক গত ১০ বছরে, অর্থাত্ বর্তমান সরকারের আমলে, গভীর এবং নিবিড় হয়েছে। বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে তার সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষভাবে বিমান ও নৌবাহিনীর, আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে চীনের কাছ থেকে ব্যাপক সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছে বলে ড. সৈয়দ মাহ্?মুদ আলী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ নিয়ে ভারতের ক্ষোভের অন্ত নেই। ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান খুবই রুষ্টভাষায় বাংলাদেশের সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু নিজস্ব উন্নতি এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে যেখান থেকে যতটুকু সাহায্য পেতে পারে, তার সবই নেবে। এজন্য ভারতের চিন্তার কোনো কারণ নেই।

ইত্তেফাক/এসএইচএম