শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হয়: আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

আপডেট : ০৮ মে ২০২১, ০৩:৪১

জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ক্ষেত্রে সরকারের সাম্প্রতিক কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দুরকানীতে একটি বিদ্যালয় জাতীয়করণের অনুমোদন দিয়েছেন। স্থানীয় অব্যাহত দাবি ও প্রচেষ্টা এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এই অসম্ভব কাজটি সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের মধ্যে যখন ঐক্য থাকে এবং যখন এলাকার বাসিন্দারা ঝগড়া-বিবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহের ঊর্ধ্বে উঠে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের প্রচেষ্টায় তত্পর হন তখনই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হয়।

তিনি গতকাল শুক্রবার বিকালে ইন্দুরকানী সেতারা স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক শোকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরো বলেন, মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না। আল্লাহতালা যাদের কাজ করার সুযোগ দেন, যাদের পছন্দ করেন তাদের মাধ্যমে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টা সফল করান। আল্লাহ আমাদের এলাকায় রহমত নাজিল করেছেন বলেই আমরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছি এবং স্বাধীনতার সুফলকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত করতে সমর্থ হচ্ছি।

তিনি বলেন, বিগত ৩৬ বছর ধরে আমি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে যে কথাটি বারবার বলেছি তাহল এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন সাধন ত্বরান্বিত হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে আমরা কাজ করার সুযোগ লাভ করেছি। দেশের সব সরকারই তাদের ক্ষমতাকালে কম-বেশি উন্নয়নকাজ করেছে। আল্লাহতালা আমাদের প্রয়োজন উপলব্ধি করেন বলেই তিনি আমাদের ওপর রহমত নাজিল করেন এবং তার ইচ্ছায় কাঙ্ক্ষিত কাজ আমরা সম্পন্ন করতে পারি।

তিনি বলেন, ভাণ্ডারিয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষ বসবাস করে, উন্নয়নের জন্য অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালায় বলেই সেখানে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন সাধিত হয়। বর্তমানে দেশে করোনাজনিত যে বৈরী পরিস্থিতি বিরাজমান তার মধ্যেও আমাদের ঐকান্তিকতার কারণে এলাকার বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেও ইন্দুরকানী সিতারা স্মৃতি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, ভাণ্ডারিয়ায় বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ভাণ্ডারিয়ায় বঙ্গবন্ধু সরণি ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা বিভেদ বা বিবাদের রাজনীতি তথা ভাঙাভাঙির রাজনীতি করেন তাদের কাছ থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহতালা তার বান্দাদের কাজ করতে বলেছেন, পাশাপাশি নামাজ পড়া ও ইবাদত-বন্দেগি করতে বলেছেন। দেশ আমাদের, জনগণ আমাদের, এটা মনে রেখে কাজ করতে হবে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ইন্দুরকানীতে আজ যে বালিকা বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলো তা নিয়ে স্থানীয়ভাবে সবার আগ্রহ সমান ছিল না। এই পশ্চাদপদ এলাকার বাসিন্দাদের সার্বিক ও নানাবিধ জীবনধারার কথা বিবেচনা করে আমরা এই নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে ছিলাম যা আজকে আল্লাহর রহমতে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহে সফল হয়েছে। মনে রাখতে হবে সরকারিকরণের পর এক সময় ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বদলিজনিত সুযোগে শিক্ষক শূন্যতাও দেখা দেয়। আমাদের অভিজ্ঞতায় যা সরকারীকরণের একটি নেতিবাচক দিকও বটে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস এই নতুন জাতীয়করণকৃত বালিকা বিদ্যালয়টি এর ব্যতিক্রম হবে। আমাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে।

ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রস্তাব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ অনুমোদন দেওয়ায় শুকরিয়া জানিয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা জেপির সভাপতি আসাদুল কবির স্বপনের সভাপতিত্বে এ কর্মসূচিতে মঞ্চে ছিলেন ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হুসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির, উপজেলা জেপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন হাওলাদার, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দিলরুবা মিলন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবেরা সুলতানা প্রমুখ।

এর আগে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দকৃত নগদ অর্থের চেক, সংসদ সদস্যের ঐচ্ছিক তহবিলের নগদ অর্থের চেক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঢেউটিন ও নগদ অর্থের চেক উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করেন।

ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ চত্বরে সুবিধাবঞ্চিত অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে এমপির ঐচ্ছিক তহবিলসহ অন্যান্য সরকারি কর্মসূচির নগদ অর্থের চেক বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। ছবি : ইত্তেফাক

দুস্থ কল্যাণ সংস্থার কাপড় বিতরণ

ইন্দুরকানী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সুবিধা বঞ্চিত অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে বেসরকারি সংগঠন দুঃস্থ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপির উপস্থিতিতে গতকাল ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়।

সকালে উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে প্রথমে এ ইউনিয়নের নির্ধারিত মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেপির সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সরোয়ার বাবুল, জেপির সহসভাপতি কাওসার উদ্দিন আহমেদ দুলাল, জেপি নেতা হারুন রশীদ পান্না, মহিলা জেপির উপজেলা সভানেত্রী রাজিয়া সুলতানা রানী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান রানা প্রমুখ। এরপর উপজেলার বালিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বালিপাড়া ইউনিয়নের নির্ধারিত মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন জেপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন।

দুপুরে উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এ ইউনিয়নের নির্ধারিত মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জেপি নেতা মশিউর রহমান মঞ্জু, জেপির সহসভাপতি শহিদুল আলম দোদুল প্রমুখ।

বিকালে উপজেলার পত্তাশী জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পত্তাশী ইউনিয়নের গরিব মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন জেপির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন হাওলাদার ও সমাজসেবী সিরাজিস শুভ তালুকদার প্রমুখ।

এরপর ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সদর ইউনিয়নের অসচ্ছল মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, জেপি নেতা এনামুল কবির, যুব সংহতির সভাপতি মজনু হোসেন রনি, ছাত্র সমাজের উপজেলা সভাপতি আক্তারুজ্জামান প্রমুখ। গতকাল শুক্রবার ইন্দুরকানী উপজেলায় দুস্থ কল্যাণ সংস্থার এই ত্রাণ বিতরণ কাজে সমন্বয়কারী ছিলেন আতিক জামান খোকন ও কাজী আতাহার আলী।

গতকাল ইন্দুরকানীতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সফরসঙ্গী ছিলেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেপির উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান মৃধা, ধাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান টুলু, জেপির ভাণ্ডারিয়া উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ আলী আকন, জেলা পরিষদের সদস্য ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক রেজাউল হক রেজভী জোমাদ্দার প্রমুখ।

 

ইত্তেফাক/ইউবি