বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিনিকলের চেনা সমস্যা

আপডেট : ৩১ মে ২০১৯, ২১:৩৮

আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানাইয়াছেন যে, আসন্ন ঈদের বেতন-বোনাস লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন সেতাবগঞ্জ চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারীবৃন্দ। কারণ, চিনিকলটির ১৬ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত রহিয়াছে। এই চিনিকলটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের আওতাধীন। চিনিকলটির তিন হাজার ২৮২ দশমিক ২৫ মে. টন চিনি বিক্রয় না হওয়ায় শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান বন্ধ রহিয়াছে গত এপ্রিল মাস হইতে। চিনি কেন বিক্রয় হইতেছে না—ইহার উত্তরে চিনিকলটি এক কর্মকর্তার বয়ানে জানা যায়, কারখানাটির নূতন উত্পাদিত চিনি গুণগতমান উন্নত হইবার পরও বেসরকারি রিফাইনিং মিলগুলি মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দরের চাইতে কম দামে বাজারে চিনি বিক্রয় করিতেছে। ফলে এই কারখানার চিনি অবিক্রীত থাকিয়া যাইতেছে।

চিনি বিক্রয় না হইবার কারণটির বিপরীতে এই প্রশ্নও তোলা যাইতে পারে—বেসরকারি রিফাইনিং মিলগুলি কি লোকসান স্বীকার করিয়া সরকারের নির্ধারিত দরের চাইতে কম দামে বাজারে চিনি বিক্রয় করিতেছে? নিশ্চয়ই নহে। ব্যবসাবাণিজ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থাকিবেই। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা না থাকিলে বাজার অর্থনীতিতে মনোপলির সমস্যা তৈরি হয়। সুতরাং চিনি অবিক্রীত থাকিবার কারণটি বাজার অর্থনীতির নিয়মেই ধোপে টেকে না। এমনিতেই বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা চিনিসহ ১৮টি কারখানার মধ্যে লাভে রহিয়াছে মাত্র দুইটি। তাত্পর্যপূর্ণভাবে এই দুইটিতে আবার চিনি উত্পাদিত হয় না। স্পষ্টতই, চিনিকলগুলির একটিও লাভে নাই। দেশে মোট চিনির চাহিদা ১৪ লক্ষ টনের বেশি। ইহার মধ্যে সরকারি মিলগুলিতে উত্পাদিত হয় মোট চাহিদার ৫ শতাংশের কাছাকাছি—যাহা অতি নগণ্য। এমনিতেই বিশ্ববাজারে চিনির দাম কম। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলিকে সুরক্ষা দিতেই চিনি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক রাখিয়াছে সরকার।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কারখানায় সরকারের লোকসানের পরিমাণ খুব শিগগিরই ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাইবে। বিশেষ করিয়া চিনি, পাটপণ্য, কাগজ, সুতা, কাপড় ও সিমেন্টের ব্যবসা করিতে গিয়া সরকারের লোকসানের বোঝা বত্সর বত্সর বাড়িতেছে। পাঁচটি সংস্থার অধীনে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলির সম্মিলিত লোকসান হইতে লভ্যাংশ বাদ দিয়া হিসাব করিলে দেখা যায়, ১০ বত্সরে নিট ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়া প্রায় ৬ গুণ হইয়াছে। আক্ষেপের সহিত বলিতে হয়, এইসব কারখানার বড় অংশ ভবিষ্যতে লাভের মুখ দেখিবে, এমন আশাও নাই। ইহা ঠিক যে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করিয়াই ভর্তুকি দেয় সরকার। তবে ভর্তুকি বেশি হইলে আর্থিক চাপ বাড়ে সরকারের। কারণ, ভর্তুকি হইতেছে এক ধরনের অনুত্পাদনশীল খাত। আর অর্থনীতির অদক্ষতার কারণেই ভর্তুকি দিতে হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল, সরকারি কারখানায় লোকসান হইলে তাহার দায় কাহারো উপর বর্তায় না। এই কারণে কাহারো কোনো মাথাব্যথাও থাকে না। অথচ বেসরকারি খাতে লোকসান হইলে তাহা ব্যবসায়ীর দায় হিসাবেই থাকিয়া যায়। সুতরাং রাষ্ট্রায়ত্ত বেশির ভাগ কারখানা যেইভাবে চলিতেছে, সেইভাবে চালাইতে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তবে ঈদ উত্সবের এই সময় বিশেষ ব্যবস্থায় হইলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বোনাসের সংস্থান করা জরুরি।