শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাইবার ক্রাইম ভয়াবহ রূপ লইয়াছে

আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৪৮

ঘটনা নূতন নহে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথা ইন্টারনেটের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই অনুপ্রবেশ করিয়াছে সাইবার ক্রাইম। নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট যখন প্রথম ব্যবহার শুরু হয়, তখন এই অপরাধ যাহারা শুরু করিয়াছিল উহা ছিল ব্যক্তি পর্যায়ে। এবং উহা ছোটোখাটো অপরাধেই সীমাবদ্ধ ছিল; কিন্তু দিন যত গড়াইয়াছে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থার যত বিকাশ হইয়াছে, এই অপরাধেরও ততটাই বিকাশ ঘটিয়াছে। পরবর্তী সময়ে এই অপরাধ দৈত্যাকার ধারণ করিয়াছে, যাহার ফলে সরকারকে সাইবার ক্রাইম ঠেকাইতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ফোর্স গঠন করিতে হইয়াছে; কিন্তু তাহাতেও ঠেকানো যাইতেছে না। বেশ কিছুকাল ধরিয়া শুধু ব্যক্তিই নহে, সংগঠিত বহু গ্রুপ এই অপরাধের সহিত জড়াইয়া রহিয়াছে। কেহ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, কেহ সন্ত্রাসবাদকে উসকাইয়া দিতে, কেহ ব্ল্যাকমেইল করিতে অথবা নিরেট কোনো ব্যক্তির মর্যাদাহানি করিতে এই অপরাধ অধিক হইতেছে। এই সব অপরাধী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত পরিচয় গোপন করিয়া ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করিতেছেন। তাহা করিতে গিয়া আবার অন্যের পরিচয়ও ব্যবহার করিতেছেন। ইহা ছাড়াও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা হইতেছে—হয় তাহাদের আইডি ব্যবহার করিয়া অথবা তাহার নামে কুত্সা রটাইয়া। সহযোগী একটি দৈনিক জানাইয়াছে, অনেকেই সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনাকে বিতর্কিত করিবার অপচেষ্টা চালাইতেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপস এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। নিজের পরিচয় লুকাইতে কেহ কেহ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করিতেছে।

আমরা জানি, সাইবার ক্রাইম প্রতিহত করিতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রবর্তন করিয়াছে। ঐ আইনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হইয়াছে। যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হইয়াছে, কেহ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করিয়া জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তাহা হইলে ১৪ বত্সরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আইনের ২৯ ধারায় বলা হইয়াছে, কাহারও বিরুদ্ধে কুত্সা রটাইলে, মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে তিন বত্সরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ৩১ ধারায় বলা হইয়াছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করিয়া কেহ অরাজকতা সৃষ্টি করিলে সাত বত্সরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। সুতরাং আইনে ঘাটতি আছে বলিয়া আমরা মনে করি না। তবে ঘাটতি রহিয়াছে সঠিক প্রয়োগে এবং নজরদারিতে। লক্ষণীয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রথম তৈরি হয় ২০০৬ সালে। তখন শাস্তির মেয়াদ ছিল কম; কিন্তু দিনে দিনে অপরাধ বাড়িয়া যাওয়ায় ২০১৩ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে শাস্তি বাড়াইয়া আরো কঠিন করা হয়; কিন্তু তাহাতেও এই ধরনের অপরাধ কমে নাই। অর্থাত্ ইহাই প্রমাণিত যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নজরদারি হইতেছে না। অনলাইনে মত প্রকাশ করিবার অধিকার সকলের রহিয়াছে; কিন্তু যাহারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হইয়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনলাইনে ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড চালাইতেছে তাহাদের উপর গভীর নজরদারি ও আইনের আওতায় আনার প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি।