শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাস চলাচল: স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়ার বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি নেই

আপডেট : ০১ জুন ২০২০, ১৪:০৭

খুলনা থেকে ফের গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দুই মাস আট দিন পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কের মধ্যেই সোমবার সকাল ৬টা থেকে খুলনা থেকে ১৮টি রুটে গণপরিবহণ চলাচল শুরু হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবহন শ্রমিক নেতারা আসন প্রতি ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়ার দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, সকাল থেকে বিভিন্ন যানবাহনে সরকারি নির্দেশনা মেনে যাত্রীদের উঠানামা করতে দেখা যায়। তবে, স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো নজরদারি দেখা যায়নি।

সোমবার সকালে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসেছেন। টিকিট কাউন্টারগুলো থেকে টিকিট কেটে যাত্রীরা বাসে ওঠার সময় তাদের মুখে মাস্ক আছে কী না দেখা হচ্ছে। এছাড়া তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। সকালে যাত্রীদের সংখ্যা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে, কাউন্টারগুলোর সামনে খুব কম যাত্রীকেই শারীরিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় অনেক যাত্রী ও বাস শ্রমিকদের পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন ও কোলাকুলি করতেও দেখা যায়।

সকাল ৭টায় সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে ঈগল, দ্রুতিসহ বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া সকাল ১০টা পর্যন্ত খুলনা-কুষ্টিয়া, খুলনা-চুয়াডাঙ্গা, খুলনা-পিরোজপুর, খুলনা-পাইকগাছা, খুলনা-ফরিদপুর, খুলনা-কালনা, খুলনা-গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে শতাধিক বাস ছেড়ে যায়। বাসের দুটি সিটের জায়গায় একজন যাত্রীকে বসানো হয়। তবে, একই পরিবারের দু’জন যাত্রী থাকলে তাদের পাশাপাশি বসানো হয়। এদিকে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবহন শ্রমিকরা আসন প্রতি ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেওয়ার দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

স্বাভাবিক সময়ে খুলনা-পাইকগাছা রুটে একেকজন যাত্রীর বাস ভাড়া ৯০টাকা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বৃদ্ধিতে বাস ভাড়া নেওয়ার কথা ১৫০টাকা। সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১৮০টাকা। এছাড়া স্বাভাবিক সময়ে খুলনা থেকে যশোরের ভাড়া ৯০টাকা। সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১৮০টাকা। একইভাবে খুলনা-ফরিদপুর ও কুষ্টিয়াসহ অন্যান্য রুটেও দ্বিগুণ ভাড়া নিতে দেখা যায়।

শরিফুল ইসলাম নামে একজন যাত্রী জানান, তিনি করোনার আগে পাইকগাছায় যেতেন ৯০টাকা দিয়ে টিকিট কেটে। আজ পাইকগাছার যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন ১৮০টাকা দিয়ে। তার অভিযোগ ১৫০টাকা দিলেও তাকে কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হয়নি। একই ধরনের অভিযোগ নড়াইল-কালনা রুটের যাত্রী আফজাল হোসেনের। আব্দুল্লাহ নামের ঢাকার এক যাত্রী ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন, করোনার সময় এমনিতেই সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তার ওপর অনেকের চাকরি নেই। চাকরি থাকলেও বেতন নেই। এ অবস্থায় বাড়তি ভাড়া মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে।

ঢাকার যাত্রী সুকুমার মল্লিক জানান, চিকিৎসার জন্য তার জরুরিভাবে ঢাকায় যাওয়া প্রয়োজন। এজন্য তিনি ১৮০০ টাকা করে গ্রিনল্যান্ড পরিবহনের দুটো টিকিট কিনেছেন ৩৬০০টাকায়। স্বাভাবিক সময়ে যার একেকটি টিকিটের মূল্য ১২০০টাকা।

খুলনা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, সরকার যে সমস্ত নির্দেশনা দিয়েছে-তা মেনেই খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে ১৮টি রুটে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে প্রতিটি বাসের শ্রমিকদের হ্যান্ডগ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং যাত্রীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থার বিষয়টি বলা হয়েছে। যাত্রীদের মুখে মাস্ক ছাড়া টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। তবে, কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই গাড়ির চালক-হেলপার ও গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, করোনা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ১৮ কোটি বেশির জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া কোনো গাড়ি চলবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, গাড়িসহ সকল জায়গায় সবাই মাস্ক পরতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ইত্তেফাক/আরকেজি