মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভোলায় কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে সৌরচালিত ‘আলোক ফাঁদ পদ্ধতি’

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৩:১৯

ফসলের মাঠে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ সনাক্তকরণ, পর্যবেক্ষণ ও দমনের জন্য ব্যবহার উপযোগী সমন্বিত বালাই ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কৃৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি। কৃষকদের সুবিদার্থে কৃষি অফিস,”কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প” এর মাধ্যমে  সৌরচালিত নতুন আলোক ফাঁদ স্থাপন করেছেন। ফলাফল ভালো হওয়ায় ফসলের পোকা দমনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে পবিবেশ বান্ধব এ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে  কৃষকরা।

এতে একদিকে যেমন পবিরেশ রক্ষা হচ্ছে অন্যদিকে চাষের খরচ কমছে কৃষকদের।  ক্ষেতে পানিভর্তি পাত্রের উপরা সৌর বিদ্যুৎ এর সাহায্যে আলো জ্বেলে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরি করে  ধানক্ষেতের  বিভিন্ন পোকা ধরেন কৃষকরা। এভাবে শুুধুমাত্র ক্ষতিকর পোকাগুলোর উপস্থিতি চিহ্নিত করে  সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত বালাই নাশক  ব্যবস্তা গ্রহন করতে পারছে কৃষকরা।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৮হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা  ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় মোট ২৮টি ব্লকে সৌরচালিত আলোকফাঁদ বিতরণ করা হয়েছে । রোগ-বালাই থেকে ফসলকে রক্ষায় প্রতিটি ব্লকে  আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় সন্ধ্যার পর আমন ফসলের ক্ষেতে  ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি যাচাইযের জন্য আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়।

 তিনি বলেন,সোলার প্যানেল এর মাধ্যমে নতুন এই আলোক ফাঁদ মাঠে স্থাপন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূর্য়ের আলোর অনুউপস্থিতিতে  জ¦লে উঠবে। সূর্য়ের আলোর উপস্থিতে সেটি আবার নিভে যাবে এবং সারা দিন চার্জ হতে থাকবে।অতি অল্প খরচে তৈরী এ পদ্ধতিটি রাতের বেলায় দেখতে দৃষ্টি নন্দন ও বটে।

বরিবার রাত ৮ টায় স্থানীয় কুতুবা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের একটি ব্লক ও বড় মানিকা ইউনিয়নের মিলনবাজার ব্লকে গিয়ে দেখা যায়,আমন ধানের ক্ষেতে সৌর প্যানেলটি   দাড় করিয়ে সুইচ অন করতেই আলো জ¦লে উঠছে।  নিচে রয়েছে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানির পাত্র। পোক আলোর প্রতি সংবেদশীল হওয়ায় উড়ে এসে লাইটের নিচে রক্ষিত গামলায় পড়ছে।কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিকর বিপিএইচ(বাদামী গাছ ফড়িং)মাজরা পোকা সহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকাগুলো চিহ্নিত করছে।আক্রমণাত্বক পোকার তীব্রতা বেশী নয়  বলে কৃষকদের কে আশ্বস্ত করেন।পরে সমন্বিত বালাই নাশক পদ্ধতির কথা বলেন উপস্থিত কৃষি কর্মকর্তা।  
জানতে চাইতে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ ফাহিম,ফিরোজ আলম জানান,এভাবে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর  পোকা চিহ্নিত করা হয়।চিহ্নিত করার পর কোন কোন পোকার কি কি ধরনের ক্ষতি করে সেই দিক বিবেচনা করে কৃষকদের কে সে অনুযায়ী সমন্বিত বালাই নাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
লক্ষীপুর ব্লকের অহিদ সর্দার,মোঃ দুলাল,আব্দুল জলিল,মিলনবাজার ব্লকের আনোয়ার হোসেন,এছহাক সহ  কৃষকরা জানান,আগে ক্ষেতে পোকার আক্রমন হলে তারা একটির পর একটি কীটনাশক প্রযোগ করতেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে কাজ হতো ,আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজ হওয়ার আগেই জমির ফসল পোকারা নষ্ট করে ফেলত। এখন আমার এ পদ্ধতিতে ক্ষতিকর  পোকা চিহ্নিত করে অফিসারদের পরামর্শ নিয়ে একটি মাত্র কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল রক্ষা করতে পারছি।এতে করে আমাদের উৎপাদন খরচ কমছে অন্যদিকে ফসল উৎপাদনের পরিমান বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ওমর ফারুক জানান, সৌর চালিত আলোকফাঁদের মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকর পোকা সনাক্ত করে লাগসই কীটনাশক ব্যবহার করার সুনিদিষ্ট পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব।যার মাধ্যমে কৃষককে কীটনাশক বাবদ অতিরিক্ত খরচের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।