শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এবার ওসি প্রদীপের ৭ ইন্ধনদাতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা 

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৫৪

টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অপরাধ কর্মের 'ইন্ধনদাতা' চিহ্নিত করে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করেছেন কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানের ছোট বোন ফাতিমা খানম।

মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মাসুম খান মামলাটি রেকর্ড করেন। মামলায় অপহরণ, ডাকাতি, জোরপূর্বক স্ট্যাম্প আদায়সহ বসতবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামিরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ফুলের ডেইলের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও থানার দালালখ্যাত মৃত তজর মুল্লুকের ছেলে আবুল কালাম প্রকাশ আলম, হ্নীলা নয়া বাজার পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মফিজ আহমদ ইকবাল প্রকাশ গুটি মফিজ, ফুলের ডেইলের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে জহিরুল ইসলাম, একই এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে দলিলুর রহমান, পানখালীর মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে সরওয়ার কামাল, ফুলের ডেইলের শরাফত আহমদের ছেলে নুরুল আবছার, মৃত আবুল বশরের ছেলে র‌্ফিকুল ইসলাম।

মামলায় বাদী ফাতেমা খানম অভিযোগ করেন, আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে মাদকের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি প্রদীপদের সাথে আঁতাত করে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে তার বড় ভাই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে অস্ত্রের মুখে তুলে এনে প্রদীপের সাথে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এরপর সাজানো মামলা দিয়ে সাংবাদিক ফরিদুলকে কারাগারে পাঠানোর পর তারা পরস্পর যোগসাজশে বাদিনীর কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার বসতবাড়িতে ২৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আকস্মিকভাবে বাড়ির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এসময় তারা বাদিনীর অপর এক বোনকে লোহার রড দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে ক্ষান্ত হননি, মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে মাটিতে ফেলে রাখে। আসামীরা ঘটনার রাতে বাদিনী এবং তার ছোট বোনের পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, নগদ ৭৫ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল সেট ও বাড়ির জরুরী কাগজপত্র লুট করে। এরপর আসামীরা বাদিনীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তিনশত টাকার একটি নন জুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পের শিরোভাগে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে লুণ্ঠিত মালামালসহ পালিয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ নওগাঁয় ব্রিজ নির্মাণের ৯ বছরেও রাস্তা নির্মাণ হয়নি; ভোগান্তিতে হাজারো জনগণ

বাদির মতে, আসামীগণ টেকনাফ থানার সাবেক ওসির দালাল, মাদক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাদিনী ও তার পরিবারকে নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি বড় ভাই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা কারাগারে থাকা এবং প্রশাসনিকভাবে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়।

কক্সবাজার থানা পুলিশ জানিয়েছে, সংঘঠিত ঘটনায় বিলম্ব হলেও মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 

তবে একটি অসমর্থিত সূত্র অভিযোগ করেছেন, এসব আসামীরা বর্তমানে কক্সবাজার ও টেকনাফে নিশ্চিন্তে থানায় দালালি, মাদক ব্যবসাসহ হরেক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ থানার বর্তমান পুলিশ আদৌ তাদের ধরবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ। 

তারা বলেন, এদের আটক করলেই সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ও তার পরিবারের উপর কেন বর্বর নির্যাতন এবং এত গুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে তার আসল রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি প্রদীপের অনেক কুকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে।

অপরদিকে, সদ্য কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদ এ ব্যাপারে জানান, ওরাসহ প্রদীপ বাহিনী আমাকে তুলে এনে ৬টি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন আমি কারাগারে ছিলাম। এরপরও মাদক ব্যবসায়ীরা আমার পরিবারের উপর কি করেছে তা আমি দেখিনি। যাদের সাথে যে অন্যায় করেছে তারা সে মামলা করবেই তো। আমি প্রদীপ গংদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আশা করি শীঘ্রই ন্যায় বিচার পাব। কারণ কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। 

ইত্তেফাক/এমএএম