চট্টগ্রামে তৈরি পোশাকশিল্পে দুর্দিন চলছে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা, ধুঁকে ধুঁকে চলছে আরো অনেকগুলো। বিজিএমইএ চট্টগ্রামের উদ্যোগে বিদ্যমান সংকটের কারণ নিরূপণ করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে চট্টগ্রামের বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলা হয় চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক শিল্পের এই দুর্দশার পেছনে রয়েছে ১০ কারণ এবং তিন ধরনের ঘাটতি।
কারণগুলো হচ্ছে, অ্যালায়েসন্স ও একর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন কারখানা সংস্কার করতে না পারা, এই শিল্পে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে অক্ষমতা, পণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়া, বিদেশি ক্রেতাদের চট্টগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, কতিপয় ক্রেতা ও বায়িং হাউসের প্রতারণা, চট্টগ্রামে তৈরি পোশাকশিল্পের অবকাঠামোগত সংকট, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, ব্যাংকঋণ পেতে দীর্ঘসূত্রতা, স্থানীয় বড়ো বড়ো তৈরি পোশাকশিল্পের পূর্ণ সক্ষমতার স্বল্পতম ব্যবহার, এবং তৈরি পোশাকের বাজারে অসম প্রতিযোগিতা। আর ঘাটতিগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্পে দক্ষতার অভাব, শিল্প প্রকৌশলগত জ্ঞানের ঘাটতি এবং কারিগরি জ্ঞানের স্বল্পতা।
গত সোমবার চট্টগ্রামের বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিজিএমইএ’র প্রথম সভাপতি মো. আদুস সালাম বলেন, পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও এলায়েন্সের শর্তানুযায়ী কারখানা সংস্কার করতে না পারার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। সেই সঙ্গে গত এক বছরে সব মিলিয়ে পোশাক কারখানার পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে ৪২ শতাংশ। আর অন্যদিকে কমেছে কাটিং অ্যান্ড মেকিং চার্জ। তার ওপর ব্যাংকগুলোতে উচ্চহারে সুদ থাকায় চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্প কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগোতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গেল ডিজিট ৯ শতাংশ সুদের কথা বলেছেন, কিন্তু এখনো ক্ষেত্র বিশেষে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশি ক্রেতারা চট্টগ্রামের দিকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। এর পেছনে হয়তো চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্পের সক্ষমতার ঘাটতি থাকতে পারে।
বিজেএমইএ নেতা মো. আবদুস সালাম আরো বলেন, ঢাকার একটি কারখানা একটি পোশাক যে খরচে তৈরি করতে পারে সেটি সেই মূল্যে চট্টগ্রামের কারখানাগুলো কোনোভাবেই তৈরি করতে পারছে না। সেই সঙ্গে নতুন বাজার সৃষ্টিতে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাকশিল্পকে আরো মনোযোগী হতে হবে। এই সংকটপূর্ণ সময়ে এখানকার তৈরি পোশাকশিল্পের বাজার ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের কাছে তৈরি পোশাকশিল্পের দাবি হচ্ছে তৈরি পোশাকের কাটিং অ্যান্ড মেকিং চার্জের ওপর গার্মেন্টস মালিকদের ডলার প্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন : ছেঁউড়িয়ায় লালন স্মরণোত্সব শুরু হচ্ছে আজ
বিজিএমইএ নেতা মো. আবদুস সালাম ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রামের ছয় শতাধিক গার্মেন্টস কারাখানাগুলো যাতে সত্যিকার শিল্প-পরিবেশে সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিকশিত হতে পারে সেজন্য চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টস পল্লী গড়ে তোলার আশ্বাস ও ঘোষণা গত ৩০ বছরে অনেকবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই ঘোষণা রূপায়িত হয়নি। বিজিএমইএ চট্টগ্রামের পরিচালক এবং মদিনা গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুসা ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রামের ছয় শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে বর্তমানে মাত্র তিন শতাধিক চালু আছে। অনেক কারখানা এখন মুমূর্ষু। চট্টগ্রামের এই শিল্পকে বাঁচাতে উপায় বের করতে আমরা সম্প্রতি বসেছিলাম।
বিজিএমইএ চট্টগ্রাম সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রামে তৈরি পোশাকশিল্পের সংখ্যা ছিল ৬৮৬। এগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩৫৮টি। বর্তমানে ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান সচল থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। সাব-কন্ট্রাক্টিং পদ্ধতিতে বর্তমান পোশাক উত্পাদন করছে ১৪২টি প্রতিষ্ঠান। গত একদশকেও চট্টগ্রামে অনেক তৈরি পোশাকশিল্প বন্ধ কিংবা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে।
ইত্তেফাক/ইউবি