শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জম্মু কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০৫

 

গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার জম্মু কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসন বাতিল করেন। একই সঙ্গে অঞ্চলটিকে দুটি প্রদেশে ভাগ করেন। এজন্য ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারাটির বিলোপসাধন করা হয়। এই ধারায় জম্মু কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া সব বিষয়ে দেওয়া হয়েছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর অনেকে এর সমালোচনায় মুখর হন। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখে এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে ব্যাপারে কারো কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। তবে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্থানীয় নাগরিকরা তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখছেন না। জম্মু কাশ্মীরে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং ফারুক আবদুল্লাহ, তার পুত্র ওমর আবদুল্লাহ ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে, তখন রাজপথে কেউ তাদের মুক্তি দাবি করছেন না। যারা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দাবি করছেন, বাস্তবে মাঠে-ময়দানে তাদেরও জনসমর্থনের অভাব রয়েছে।

কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারত সরকার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও নিয়েছে। যেমন—সরকারি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে জম্মু কাশ্মীর সরকার ২০টি জেলায় টুজি ইন্টারনেট সুবিধা পুনরায় চালু করেছে। গত ৫ আগস্ট এই অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত্, পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪ লাখ মানুষ চিকিত্সাসেবা নিয়েছে। ৩৫ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছে। ১১ হাজার রোগীর সার্জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও শিশু খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। জম্মু কাশ্মীরের ৯২ শতাংশ এলাকায় চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখের ১৯৯টি থানার মধ্যে মাত্র ১১টিতে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ব্যাংকিং ও এটিএম সুবিধা স্বাভাবিক। রান্না করার গ্যাসের কোনো সংকট নেই। সরকারি অফিস ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিকভাবেই কাজ করে যাচ্ছে।

জম্মু কাশ্মীরে অর্থনৈতিক কর্মাকাণ্ডও বাড়ছে। ৭ লাখ কৃষক এবার ২ দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন আপেল উত্পাদন করেছেন। এসব কৃষকের ৫০ শতাংশ আপেল সরকার কিনে নিচ্ছে, যাতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। বেকার যুবকদের জন্য ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর ২০১৯ জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের হার ছিল ৯৮ শতাংশ। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল ৩০ শতাংশ আসন । শুধু তাই নয়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার জম্মু কাশ্মীরের জন্য ৩০ হাজার ৭৫৭ কোটি রুপি এবং লাদাখের জন্য ৫ হাজার ৯৫৮ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে।

গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তান চীনের সাহায্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুটিও উত্থাপন করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য মনে করেন, এজন্য নিরাপত্তা পরিষদ সঠিক ফোরাম নয়। এটি ভারত ও পাকিস্তানের একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়। গত বছর আগস্টে চীনের আহ্বানে নিরাপত্তা পরিষদ জম্মু কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আয়োজন করে। সেসময়ও পাকিস্তানের পক্ষে মধ্যস্থতা করতে চাননি কেউ। গত ২২ জানুয়ারি ড্যাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাইডলাইন বৈঠকগুলোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জম্মু কাশ্মীর পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। ভারত তা প্রত্যাখান করে।

গত সাড়ে তিন দশক ধরে এই অঞ্চল সন্ত্রাসবাদে জর্জরিত। ভারত সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। গত ৯ জানুয়ারি বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ১৫ জন কূটনীতিক দুই দিনের সফরে জম্মু কাশ্মীর পরিদর্শন করেন। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফিজি, মালদ্বীপ, নরওয়ে, ফিলিপিন্স, মরক্কো, আর্জেন্টিনা, পেরু, নাইজার, নাইজেরিয়া, গায়ানা ও টোগোর মিশন প্রধানগণ। এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিগণ জম্মু কাশ্মীর পরিদর্শন করেন। কাশ্মীরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও উন্নয়ন তাদের স্বচক্ষে দেখানোই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : ফাইজুল ইসলাম