বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শুধু একজন রোগীর জন্য ওষুধ বানালেন বিজ্ঞানীরা

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৩৪

মস্তিষ্কের দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আট বছরের মেয়ে মিলা মাকোভেক। ‘ব্যাটেন ডিজিজ’ নামের মস্তিষ্কের ওই দুরারোগ্য রোগটি যখন ধরা পড়ে তখন কোনো ওষুধই ছিল না চিকিৎসকদের হাতে। এরপর শুধু মিলার চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরিতে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা।

 

এক বছরের কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন চিলড্রেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা আবিষ্কার করেছেন কাঙ্ক্ষিত সেই ওষুধ। ওষুধটির নামও দেওয়া হয়েছে মিলার নাম অনুযায়ী—‘মিলাসেন’। মিলার ডিএনএ’র ত্রুটি সারাতে ব্যবহূত হচ্ছে ওষুধটি।

 

 

দুরারোগ্য মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত মিলার রোগ ধরা পড়ে তিন বছর বয়সে। তখন থেকে তার ডান পা ভেতরের দিকে ঘুরে যেতে শুরু করে। এক বছর পরে তার দৃষ্টিশক্তি এতটাই কমে যায় যে, কোনো বই পড়তে হলে তাকে মুখের কাছে ধরতে হতো। পাঁচ বছর বয়সের সময় সে প্রায়ই পড়ে যেত এবং তার হাঁটাচলা অসংলগ্ন হয়ে পড়েছিল। ছয় বছর বয়সে মিলা এক প্রকার অন্ধ হয়ে যায়। কথা বলাও এক প্রকার কমে যায়। প্রায়ই মূর্ছা যেত। জিনগত বড়ো ধরনের পরিবর্তনের কারণে এই রোগটি তৈরি হতে পারে। যার ফলে কোষের ভাঙন বন্ধ এবং বর্জ্য পরিশোধন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নতুন আবিষ্কৃত ওষুধটি প্রয়োগের পর থেকে মিলার মূর্ছা যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। যদিও এখনো তাকে পুরোপুরি সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব হয়নি।

 

ব্যাটেন ডিজিজ সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগের ফলে ক্রমে মস্তিষ্কের নিউরনে ক্ষয় হতে থাকে, স্নায়ুর সমস্যা তৈরি হয় এবং চোখের রেটিনা আক্রান্ত হয়। এটি একটি বিরল রোগ। কিন্তু এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমস্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে এবং সুস্থ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও কমতে থাকে। আক্রান্তের শরীরের ভেতরের আবর্জনার জন্ম হতে থাকে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষগুলোর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।

আরো পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের বিষয়ে নির্দেশনা দিবেন রবিবার

মিলার পরিবারের সদস্যদের ব্যাটেন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের জিনে এই রোগটি রয়েছে। তখন তারা ‘মিলা’স মিরাকল ফাউন্ডেশন’ নামের একটি অভিযান শুরু করেন। ড. টিমোথি ইয়ু বলন, এক রাতে যখন আমি খাবার টেবিলে বসেছিলাম, আমার স্ত্রী জানালেন যে, তার একজন বন্ধু ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে কলোরাডোর একটি পরিবার সাহায্য কামনা করছে। মিলার সঙ্গে টিমোথির প্রথম দেখা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এবং এরপরে তাদের বেশ দ্রুত সাক্ষাত হয়। তাদের চিকিৎসক দলটি মিলার ডিএনএ-র জিনোম সিকোয়েন্সি (জিন মানচিত্র) তৈরি করে, তার জেনেটিক কোড বের করে এবং দেখতে পায়, জিনের একটি অভিনব পরিবর্তন হয়েছে। ত্রুটি শনাক্ত করার পর গবেষকরা চিন্তা করতে শুরু করেন যে, রোগটির একটা চিকিৎসক পদ্ধতি তারা খুঁজে বের করতে পারবেন। তারা একটি ওষুধের নকশা করার পরে গবেষণাগারে মিলার কোষ এবং পশুর ওপর সেটির পরীক্ষা করেন। সেখানে সফলতা পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন থেকে স্বীকৃতিও পেয়ে যান তারা। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ‘মিলাসেন’ নামের ওই ওষুধ দিয়ে মিলার চিকিত্সা শুরু করা হয়। সাধারণত কোনো ওষুধের আবিষ্কার, ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রোগীদের হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ১৫ বছর লেগে যায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিকিৎসক দলটি মাত্র এক বছরে ওষুধটি আবিষ্কার করে রোগীর ওপর প্রয়োগ করেছেন।

 

চিকিৎসকরা বলেন, যখন আমরা কাজটি শেষ করে পেছনের দিকে তাকালাম, আমরা খুব গর্ববোধ করলাম আর অবাক হলাম। মাঝে মাঝে অবুঝের মতো হওয়াটা ভালো, বিশেষ করে আমরা যখন জানি একটি শিশুর আয়ু কমে যাচ্ছে। তখন টিমের সবাই অসাধারণ দ্রুত গতিতে কাজ করার তাগিদ বোধ করেছে। তিনি আরো বলছেন, আমাদের জানা মতে এমন আর কোনো ঘটনা নেই, যেখানে কোনো ওষুধ এইভাবে তৈরি করা হয়েছে।—বিবিসি

 

ইত্তেফাক/ইউবি