জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, নির্বিচারে আটকসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এই প্রস্তাব যৌথভাবে উত্থাপন করেছিল ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট আবারো শুরুর পর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মোট তিনটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।
এদিকে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করতে তহবিল বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। জাতিসংঘের ৩০৭ কোটি ডলারের এই তদন্ত তহবিলে প্রথমবারের মতো সিরিয়া ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাবে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৩৪ দেশ পক্ষে এবং ৯ দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ২৮টি দেশ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাশ হওয়া কোন প্রস্তাব দেশটি মানতে বাধ্য না হলেও বিশ্ব মতামতের ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রস্তাব প্রভাবের প্রভাব রয়েছে। তবে মিয়ানমারের দাবি, তারা উগ্রবাদীদের দমন করতে এসব অভিযান চালিয়েছে।
এই প্রস্তাব অনুমোদনের পর জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাও দো সুয়ান বলেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামে আরেকটি বৈষম্যমূলক ও বিশেষভাবে বাছাই করার দ্বৈত আচরণ। যার মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই প্রস্তাবটি রাখাইন রাজ্যের জটিল পরিস্থিতি সমাধানে কোন ভূমিকা রাখবে না। বরং সেখানে অবিশ্বাসের বীজ বপন করবে। তার মতে, এই প্রস্তাব ওই অঞ্চলে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে আরো মেরুকরণ তৈরি করবে।
জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে চার দশক ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ব্যাপারে সতর্কবার্তা তুলে ধরা হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে এসেছে প্রায় সাড়ে সাত রোহিঙ্গা। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে র আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ওই মামলায় গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর শুনানি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা সিটি নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা রবিবার
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে জাপান
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তার দেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে- রাখাইনে কোনো গণহত্যা হয়নি। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গাম্বিয়ার আবেদন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত খারিজ করে দেবে বলেও তার সরকার আশা করে।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইচিরো মারুয়ামা বৃহস্পতিবার বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে বা তাদের এরকম কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করি না। বরং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) পূর্ববর্তী হামলার জেরেই ওই অভিযান চালিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে বিকৃত তথ্য পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
ইত্তেফাক/এসইউ