উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষার জন্য রাজস্ব থেকে জলবায়ু পরিববর্তন মোকাবিলায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা। গতকাল এক ভার্চুয়াল সেমিনারে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, একটি জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রয়োজন, যা সরকারকে উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দের দিকনির্দেশনা দিতে পারে। বেড়িবাঁধ উন্নয়ন নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি তারা এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপের জন্য কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, এটি সত্য যে, উপকূলীয় সুরক্ষা ছাড়া উন্নত বাংলাদেশ কল্পনা করা অসম্ভব। তাই উপকূলের সমস্যাকে কোনো অঞ্চলের আলাদা কোনো সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করে এটিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আইনুন নিশাত বলেন, বাজেট বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। বাঁধবিষয়ক পরিকল্পনায় এই পরিস্থিতি অনুপস্থিত। ‘ডেল্টা প্ল্যান’-এর আওতাধীন প্রকল্পগুলো পরবর্তী ৫০ বছরের দুর্যোগ পূর্বাভাসকে বিবেচনা না করেই গ্রহণ করেছে।
সংসদ সদস্য মীর মোশতাক আহমেদ রবি বলেন, উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষায় বিনিয়োগ করলে সেটা জাতীয় অর্থনীতিতে দ্বিগুণ ফেরত দিতে পারে। তিনি এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদলে বাঁধের তাত্ক্ষণিক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় সরকারকে বেড়িবাঁধ বাজেট প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করেন।
সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে তারা জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দিতে পারছে না। এ কারণেই কক্সবাজার জেলার কিছু অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে বিলম্ব হওয়াই ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক এ বিষয়ে নীতি প্রণয়ন জোরদার করতে উপকূলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি ‘ককাস’ গঠন করার ওপর জোর দেন। সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ কৌশল ও পদ্ধতিকে সরকারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এটা করা সম্ভব হলে এটি অগ্রাধিকার পাবে। এর জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় প্রয়োজন।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তার সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সৈয়দ আমিনুল হক। সেমিনারে বেশ কয়েক জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন। তারা হলেন নারায়ণ চন্দ্র (খুলনা-৫), নুরুন্নবী চৌধুরী (ভোলা-৩), জাফর আলম (কক্সবাজার-২)। সিপিআরডির মো শামসুদ্দোহা ও ক্লিন খুলনার হাসান মেহেদী।