বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার হতে স্থানীয় বাজার

আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:২৪

বিশ্বে বিত্তশালীদের তালিকায় অনন্য একটি নাম আমানসিও অর্তেগা। জন্ম ১৯৩৬। একটি সাধারণ দরিদ্র পরিবারের বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনায় ছিলেন খুবই আগ্রহী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে জীবিকার জন্য শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন।

পরবর্তীতে তিনি কাপড় বানিয়ে বিভিন্ন শপে বিক্রি করতেন। ১৯৭৫ সালে অর্তেগা প্রথম আউটলেট দেন যার নাম দেন ‘জারা’। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১০ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক আউটলেট খুলে বসেন পর্তুগালে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯৩টি দেশে ৭০০০ আউটলেট আছে ইন্ডিটেক্স গ্রুপের। জারার সঙ্গে আরও ৭টা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যুক্ত করে অর্তেগা গড়ে তুলেন ইন্ডিটেক্স গ্রুপ।

বিশ্বের অন্যতম সফল ও ধনী ব্যবসায়ী আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাটা মি. জ্যাক মা। তার ভবিষ্যৎ ভাবনায় বিশ্বায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। পণ্যগুলোর লেবেল হবে ‘মেড অন ইন্টারনেট’। লেবেল গুলোতে আর লেখা হবে না ‘মেড ইন চায়না অথবা মেড ইন বাংলাদেশ। ই-কমার্স খুব দ্রুত ও সহজেই দেশের বাইরে পৌঁছে দিবে পণ্য। 

এবার আসা যাক বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ড রিটেইলিং প্রসঙ্গে।  বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শিল্পের গত ৪ দশকের ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। অনেক চড়াই উৎরাই- শত সহস্র বাধা পেরিয়ে এই শিল্প আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি অংশ দখল করে আছে। সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পুরো শিল্পের কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডিজনি বাংলাদেশের পণ্য আমদানির উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তাও তুলে নিয়েছে। বিশ্বের প্রথম ১০টি গ্রিন ফ্যাক্টরির ৭টিই বাংলাদেশে। এসব বিবেচনায় এখনই পোশাক রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলো স্থানীয় বাজারে ফ্যাশন রিটেইলিংয়ে এগিয়ে এসেছেন। অভিজ্ঞদের মতে স্থানীয় ফ্যাশন বাজারের আকার বাৎসরিক ৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। এই স্থানীয় চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করেছে স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারীরা। আর কিছু আইটেম প্রধানত ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। চায়না এবং ভারতেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাদের স্থানীয় বাজারে নিজেদের ব্র্যান্ডগুলোর প্রবৃদ্ধি ও লাভজনকে রূপান্তরের জন্য শক্তিশালী উৎস হিসেবে কাজ করছে। 

No description available.

বাংলাদেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠী ফ্যাশন রিটেইলিংয়ের জন্য খুবই উপযোগী। আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার নিজস্ব ফ্যাশনকে গ্লোবাল ট্রেন্ডিংয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে ভালো করার পরের ধাপই হচ্ছে নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ। এটা করতে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে আউটলেট ও ই-কমার্সের মাধ্যমে। আর জ্যাক মার ‘মেড অন ইন্টারনেট’ থিওরি আমাদের বাংলাদেশে বসেই বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডিং করতে সহায়তা করবে। 

এ সকল সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ গুলোকে বিবেচনায় রেখে স্নোটেক্স গ্রুপ ২০১৮ সালে স্থানীয় বাজারে তার লোকাল ব্র্যান্ড ‘সারা লাইফস্টাইল’ চালু করেছে। স্নোটেক্স এর ২০ বছরের অধিক সময় ধরে বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা, তা ‘সারা’কে আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন ও মানসম্মত পোশাক তৈরিতে সাহায্য করেছে। সমগ্র ঢাকা শহরের মধ্যে ৬টি আউটলেট এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। খুব শিগগিরই ঢাকার বাইরে আউটলেট করার পরিকল্পনা আছে। এছাড়াও ‘সারা’র একটি শক্তিশালী ই-কমার্স টিম কাজ করছে। 

স্নোটেক্স ছাড়াও অন্য কয়েকটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বাজারে ফ্যাশন ব্র্যান্ড চালু করেছে। আমাদের স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোকে বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

* আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের পূর্বে স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করে অবস্থান শক্ত করতে হবে। * ক্রেতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দ্রুততম সময়ে বাজারে দিতে হবে। * পণ্যের গুণগত মান, সেবা এবং বিক্রয়ত্তোর সেবা দিয়ে ক্রেতার মন জয় করতে হবে কারণ ব্রান্ডিংয়ে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ * ফ্যাশন ট্রেন্ড বদলের জন্য নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে। কে কি করছে তা কখনও মুখ্য বিষয় নয়। *  বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি হিসেবে পণ্যের বৈচিত্র্য ও ভ্যালু এডিশনের জন্য যথাযথ বিনিয়োগ করতে হবে।  * আমাদের দেশের মসলিন বা জামদানির মত ইউনিক ও বিশেষায়িত পোশাকগুলোতে মনোনিবেশ করা উচিত। এগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা তৈরি করতে হবে। * বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করতে হবে। আমরা যেন হাই এস এম ভি সম্পন্ন প্রোডাক্টগুলো সহজে উৎপাদন করতে পারি।

 

ইত্তেফাক/ইউবি


 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন