বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যেসব আমলে বরকত লাভ হয়

আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২১, ১৭:২৪

‘বরকত’ একটি ইসলামি পরিভাষা। বাংলা ভাষায় বরকতের সর্বাধিক প্রচলিত অর্থ ‘প্রাচুর্য’ হলেও ইসলামি পরিভাষায় ব্যবহূত বরকত শব্দের অর্থগত ব্যাপ্তি আরো বিস্তৃত। বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বলেছেন- বরকতের ধারণা শুধু বস্তুর পরিমাণগত ধারণায় আবদ্ধ নয়; বরং বরকত হলো যথাযথভাবে কোনো বিষয়ের কল্যাণ ও তৃপ্তি লাভ করা।

ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সব বরকতের উত্স মহান আল্লাহ। সুরা মুলুকের শুরুতেই আল্লাহ বলেছেন, ‘বরকতময় তিনি যার হাতে রাজত্ব। যিনি সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।’

বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ আল্লাহ তায়ালার একান্ত অনুগ্রহ। আল্লাহর পক্ষ থেকে যার ওপর কল্যাণ নেমে আসে, তা পরিমাণে কম হলেও অনেক উপকারী হয়। তা হতে পারে সন্তানসন্ততি, ধনসম্পদ, আমল ইত্যাদিতে।

বরকত বান্দার জন্য জরুরি বিষয়। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন, কিন্তু সে জীবনে ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি কিংবা আমল-ইবাদতে কোনো বরকত নেই। আবার অনেকে পরিশ্রম করেন কিন্তু প্রাপ্তি সেভাবে আসে না। এর অর্থ হলো কাজে কোনো বরকত নেই। পক্ষান্তরে এমন অনেক লোক আছেন, যারা কম হায়াত পেয়েছেন কিন্তু ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি, ইবাদত-আমলে বরকত লাভ করেছেন। অনেকে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করেন কিংবা অল্প বেতনে কাজ করেন, কিন্তু তাতে বরকত আছে। তাই প্রত্যেকটা কাজে বরকত খুব জরুরি। কিন্তু এ বরকত লাভের কার্যকরী উপায় কী?

প্রথম উপায় হচ্ছে ইমান ও তাকওয়া। আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকে ভয় করলে তিনি বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ দান করেন। সুরা আরাফের ৯৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন—‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনত এবং খোদাভীতি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের দরুণ।’

সুতরাং শিরক, কুফর ও নেফাক থেকে নিজেদের ইমানকে হেফাজত করতে হবে। আল্লাহকে সব বিষয়ে বেশি বেশি ভয় করতে হবে। তবেই আল্লাহ ঐ বান্দার জন্য আসমানি ও জমিনের সব বরকতের দুয়ার খুলে দেবেন। রসুলুল্লাহ (স) প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে বলেছেন।

নবিজি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খাবার খায় আর যদি সে বিসমিল্লাহ বলে তাহলে শয়তান ঐ খাবারে অংশ নিতে পারে না। যেটুকু খাবার আছে তা পরিমাণে কম হলেও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।’ অনুরূপভাবে কেউ যদি ঘরে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ বলে তখন শয়তান তার সঙ্গে বাসায় ঢুকতে পারে না। এভাবে বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কাজ থেকে মাহরুম হয়। আর আল্লাহ তাআলা সব কাজেই বরকত দান করেন।

কোরআনের সঙ্গে আমরা আমাদের সম্পর্ক যত বাড়াব তত বরকত লাভ করতে পারব। যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হবে, কোরআনের চর্চা হবে, সে ঘরে নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও বরকত। আল্লাহ সুরা আনআমের ১৫৫ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘এটি এমন একটি কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব বরকতময়। অতএব, এর অনুসরণ করো এবং ভয় করো। যাতে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হও।’

দান-সাদকার মাধ্যমেও বরকত লাভ হয়। তাই আমাদের বেশি বেশি দান করা উচিত। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেও বরকত পাওয়া যায়। তাই আমরা কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করব না, বরং তাদের খোঁজখবর নেব এবং তাদের হক আদায় করব। ইস্তেগফারকারী ও দরুদ শরিফ পাঠকারীর ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। সুতরাং আমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়তে থাকব এবং নবিজির ওপর দরুদ শরিফ পড়ব। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক: আজিমপুর দায়রা শরিফের বর্তমান সাজ্জাদানশিন পির ও মুতাওয়াল্লি।

ইত্তেফাক/এএএম/এনএজেডএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন