বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যত অভিযোগ

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১২:৫৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নানা সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যায় না। উদ্ভট নিয়মনীতির সঙ্গে রয়েছে কর্মচারীদের খারাপ আচরণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহাদী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরা হয় একটা দেশের বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ অর্থাৎ ভবিষ্যৎ তৈরির প্ল্যাটফর্ম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি হলো সেই প্ল্যাটফর্মের প্রাণকেন্দ্র। যেখানে জ্ঞানার্জনের সুযোগের সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহ পাবে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গেলে সেই উৎসাহ তো দূরের কথা উলটো বিতৃষ্ণা জন্মায়। বইয়ের অভাব, উদ্ভট নিয়মনীতির সঙ্গে  রয়েছে কর্তব্যরত কর্মচারীদের খারাপ আচরণ।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বই নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ক্যাটালগ থেকে বই খুঁজতেই ২০-২৫ মিনিট সময় পার হয়ে যায়। গ্রন্থাগারে বিভাগভিত্তিক বই সাজানো থাকে না। কোনো সুযোগ-সুবিধা না পওয়া গেলেও নিয়মের গ্যাঁড়াকলে গ্রন্থাগারে যাওয়া হয় না। এসব সমস্যার কারণেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনীহা।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। ছবি: ইত্তেফাক

গ্রন্থাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে মোট পুস্তক সংখ্যা ৩১ হাজার ৬০০, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপার্যপ্ত। ৮টি পাবলিশার্সের প্রকাশনায় ই-বুকসের সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০। ই-জার্নালের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১০০টি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ই-লাইব্রেরি সেবা চালু হয় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ। ই-লাইব্রেরির জন্য ল্যাপটপ আছে ১০৩টি। গবেষণা কাজের জন্য প্রিজার্ভ পত্রিকা ৯টি। রেফারেন্স বই ১ হাজার ৪৮০ টি, পিরিউডিক্যাল বই ২ হাজার ৪০৫ টি। রেফারেন্স শাখায় জার্নাল ১ হাজার ১০১টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১ হাজার ৬৭২টি। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের ৩৮টি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি গবেষণা কক্ষ এবং ৩৫০ টি আসন আছে।

পর্যাপ্তসংখ্যক বই কেন নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক এনামুল হক বলেন, ‘বই কেনার এখতিয়ার আমাদের আছে, তবে এখানে বই কেনার বাজেট ডিপার্টমেন্টগুলোতে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রতি বিভাগ থেকে ৩ কপি কেনা হয় এবং আমাদের দুই কপি বা এক কপি দেওিয়ার কথা, তবে অনেক সময় আমরা তাও পাই না।’

গ্রন্থাগারে বই নিয়ে প্রবেশের নিয়মের ব্যাপারে বলেন, ‘কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারেই বই নিয়ে প্রবেশের নিয়ম নেই, তবে আমাদের যদি অন্য কোথাও আলাদা জায়গা দেওয়া হয় তাহলে আমরা বই নিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে পারি।’

গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের রূঢ় ব্যবহারের ব্যাপারে বলেন, ‘গ্রন্থাগার সংশ্লিষ্ট কেউ যদি কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন, বিষয়টি আমাদের জানানো হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সার্বিক বিষয়ে বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে গ্রন্থাগার অটোমেশনের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশাকরি খুব দ্রুতই আমাদের সেই কার্যক্রম শুরু হবে। ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা যাতে ই-লাইব্রেরি এক্সেস করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারমুখী করার জন্য আমরা আগামী বছর থেকে ডিপার্টমেন্টভিত্তিক নতুন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করব।’

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। ছবি: ইত্তেফাক

আধুনিকায়ন হলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা ৯০ শতাংশ কমে যাবে বলে আশা করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রন্থাগারিকের সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি। গ্রন্থাগারকে শিক্ষার্থীবান্ধব করার জন্য চেষ্টা আছে। কিছু নিয়মনীতি শিথিল করার বিষয়ে আমরা ভাবছি। তবে উন্মুক্ত গ্রন্থাগারে যারা পড়ে তাদের বেশিরভাগই চাকরি প্রত্যাশী এবং যারা পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরা ঢুকতে পারবে না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন কাজ অব্যাহত আছে। শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারমুখী করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বাজেট বাড়িয়েছি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে একাডেমিক বই কেনার ব্যবস্থা করছি। যার এক কপি বই থাকবে ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে, আর এক কপি থাকবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে।’

ইত্তেফাক/এএএম