শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিজের চাকরিচ্যুতির চিঠি গোপন করে রক্ষার চেষ্টা! 

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬

কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত সেপ্টেম্বরে কলেজ গভর্নিং বডিকে নির্দেশ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে চিঠি পৌঁছে খোদ অধ্যক্ষের কাছেই। আর নির্দেশনার চিঠিটি গোপন রাখেন অধ্যক্ষ। এ কারণে চিঠি আর পৌঁছে না গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে। ফলে এখনও স্বপদে বহাল সেই অধ্যক্ষ।

রাজধানীর এই কলেজটির নাম টিএন্ডটি মহিলা কলেজ। আর যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে সেই অধ্যক্ষ ড. মো. মহসিন হোসেন। 

ইনডেক্স জালিয়াতি করে রাজধানীর টিএন্ডটি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ নেন এবং এমপিওভুক্তও হন তিনি। বিষয়টির প্রমাণ মেলে সরকারি একাধিক তদন্তেও। ফলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এই অধ্যক্ষের এমপিও বাতিল করে। এমপিওকাণ্ডে জড়িত শিক্ষা অধিদপ্তরের এক উপ-পরিচালককে সম্প্রতি ঢাকার বাইরে বদলিও করা হয়। 

ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজ হওয়ায় এই অধ্যক্ষের নিয়োগের সঙ্গে জড়িত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। ফলে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রমাণ মেলে ইনডেক্স জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পেতে বিধি অনুযায়ী ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। 

কিন্তু ডিগ্রি পর্যায়ে কলেজে তার শুধুমাত্র ৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে তার নিয়োগদান, যোগদান এবং যোগদান কোনটিই বিধি অনুযায়ী হয়নি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিধি অনুযায়ী এই ব্যবস্থার অর্থ হলো কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এই নির্দেশনা গত ৯ সেপ্টেম্বর কলেজাটির গভর্নিংবডির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এই চিঠি গভর্নিং বডির সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাননি। 

এ বিষয়ে তিনি গতকাল ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধির কাছে জানান, চিঠির বিষয় আমি জানিনা। আমি পাইনি, আমাকে জানানোও হয়নি। কোন চিঠি পাঠালেতো কলেজের ঠিকানায় আসে। আর অধ্যক্ষ তা গ্রহণ করেন।

তিনি জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অনিয়মের মাধ্যমের নিয়োগের বিষয়টির প্রমাণও মেনে। কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকার কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে। এ কারণে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।  

আর যার সাক্ষরে এই নির্দেশনা কলেজে পাঠানো হয়েছে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাতিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত সেপ্টেম্বরে গভর্নিং বডির কাছে পাঠিয়েছি। তিনি না পেলে আমাকে জানাতে পারতেন। তবে সভাপতির ই-মেইলে আজ মঙ্গলবার এই নির্দেশনা যুক্ত চিঠিটি পাঠাবেন বলে তিনি জানান। 

তবে কলেজটির অধ্যক্ষ ড. মহসিন জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত চিঠি পেয়েছি। কাল (৩০ নভেম্বর, মঙ্গলবার) সভাপতিকে দিবো। তবে কেন সভাপতিকে এই চিঠি পৌঁছাননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভাপতি দেশের বাইরে থাকায় তাকে চিঠি পৌঁছানো যায়নি। গত ২৪ নভেম্বর তিনি এই চিঠির হার্ড কপি পেয়েছেন বলে জানান। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরির্দশককের সাক্ষর রয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। সে চিঠি গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসতে আড়াইমাসের বেশি লাগবে কেন? গভর্নিং বডির চিঠি এতদিন অধ্যক্ষ গোপন করেছেন এমন মত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদেরও।  

ইত্তেফাক/এএএম