শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লাইফস্টাইল ইকোসিস্টেম নিয়ে কাজ করছেন দেওয়ান কানন

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২৬

দেশে লাইফস্টাইল ইকোসিস্টেম নিজে কাজ করছেন তরুণ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা দেওয়ান কানন। মোবাইল ফোন, একসেসরিজ, খাদ্য, ই-কমার্স, সলিউশন সার্ভিস, রিটেইল চেইন শপ, ফার্মাসি ইত্যাদি নিয়ে তার একাধিক উদ্যোগ রয়েছে।

কি করে এত অল্প বয়সে এতগুলো উদ্যগে সফল হয়েছেন এমন জবাব খুজতে গিয়ে জানা যায়, কাননের প্রতিটা উদ্যোগই সফলতা পেয়েছে তার একাগ্রতা ও সফলতা অর্জনের পেছনে লেগে থাকার কারণে। অন্যরা সফল হলে কেন তিনি পারবেন না, এই জেদই এতো অল্প বয়সে সাফল্য এনে দিয়েছে তরুণ এই উদ্যোক্তাকে। বাংলাদেশের বর্তমান ই-কমার্স ব্যবসার প্রেক্ষাপট, উদ্যোক্তা হিসেবে ডিজিটালদেশকে নিয়ে স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করেছেন ইত্তেফাক অনলাইনের সাথে। পাঠকদের সাথে তা তুলে ধরা হলো।

ইত্তেফাক: একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমানের বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন?

দেওয়ান কানন: আমি মনে করি প্রযুক্তির সহায়তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি উদ্যোক্তার জীবনে আত্মনির্ভরশীলতা এনে দিতে সক্ষম হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির কারণে পণ্যের সোর্সিং সম্পর্কে খুব সহজেই জানা ও কেনাকাটা করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা খুব কম খরচেই এবং খুব সহজেই নিজেদের পণ্যের প্রসার ঘটাতে পারছি। ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ঘরে বসে নিজেদের উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে শুরু করে পরিচালনা করা সহজতর হয়েছে শুধু প্রযুক্তির কারণে। এছাড়া  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রয়াস, সেটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও সফল রূপদান করতে প্রযুক্তির সহায়তা তথা স্মার্ট ডিভাইস, ইন্টারনেট, সার্ভিস, টেকনোলোজির ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি।

ইত্তেফাক: প্রযুক্তির অনেক শাখা থাকতে আপনি সলিউশন সার্ভিসের প্রতি আগ্রহী হলেন কেন?

দেওয়ান কানন: প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রযুক্তি সম্পর্কিত যেসকল স্থানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে সেখানে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। বাংলাদেশি কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স এর ব্যবহার এবং এর মার্কেট দিনদিন অনেক বড় হচ্ছে। কনজ্যুমার ইলেক্ট্রনিক্স গ্রাহকরা আফটার সেলস সার্ভিস নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকে এবং প্রয়োজনে দ্রুত আফটার সেলস সার্ভিস পেলে খুবই খুশি থাকে এতে করে পণ্য ও কোম্পানিরে প্রতি লয়াল থাকে।

কনজ্যুমার এর সন্তুষ্টি এবং ব্যবসার প্রসারের বিষয় বিবেচনায় রেখেই আমি সলিউশন ব্যবসায় প্রধাণ্য দিয়ে থাকি। আমাদের কোম্পানি কুইকফিক্স লিমিটেড বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমীর কান্ট্রি সার্ভিস পার্টনার হিসেবে কাজ করছে যা ২০১৯ সালের চতুর্থ কোয়াটার  থেকে এখন পর্যন্ত  বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান আফটার সেলস স্মার্টফোন ব্যান্ড। এই বড় অর্জনের পিছনে কাজ করেছে কুইকফিক্সের অত্যন্ত দক্ষ টিম।

আমরা আমাদের সার্ভিস ব্যাবসার পরিধি শুধু স্মার্টফোন না, বরং পুরো ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রির সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে চাই সামনের দিনে। এই জায়গাটাতে কোনো বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড এখনও তৈরি হয় নাই। আমরা আমাদের কনজ্যুমার এর কাছে আফটার সেলস্ সার্ভিস এর সবচেয়ে বিশ্বস্ত নাম হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরতে চাই ইনশাল্লাহ

ইত্তেফাক: সার্ভিস সলুশান নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হলেন কেন?

দেওয়ান কানন: দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার ও দিন দিন বেড়েই চলছে। তারই ধারাবাহীকতায় বর্তমানে 8০ শতাংশের উপর গ্রাহক স্মার্টফোন নির্ভর। আমরা পণ্য বিক্রয় করার পর উল্লিখিত বিষয়গুলো অনুধাবন করে সার্ভিস সলুশান নিয়ে কাজ করা আরম্ভ করি। বর্তমানে আমরা গ্রাহকদের একটি কমপ্লিট প্যাকেজ অফার করছি। যার দরুন আমরা শুধু প্রযুক্তি পণ্য বিক্রয় ই নয়, বিক্রয় এর পর বিক্রয় পরবর্তী সেবা দিয়েও গ্রাহকদের পাশে থেকে এই বাজারে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন চেস্টা করছি।

ইত্তেফাক: ই-কমার্স খাত এখন বেশ টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। সেই সময়ে ই-কমার্সে আসা কতটা যুক্তিযুক্ত?

দেওয়ান কানন: দেখুন, আমাদের ব্যবসার যে মূল ধারা সেটি হলো আমাদের গ্রাহক কে “স্বচ্ছ পণ্য ও সেবা প্রদান” তারই ধারাবাহিকতায় আমরা বিগত ১০ বছর যাবত গ্রাহকদের ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি নির্ভর চাহিদা মিটিয়ে আসছি। আমরা যেহেতু ডিস্ট্রিবিউশান, রিটেইল ও সার্ভিস নিয়ে দীর্ঘদিন সফলতার সাথে কাজ করে আসছি, বিগত দিনের এই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি, আমাদের দেশের ই কমার্স খাত টি বেশ পটেনশিয়াল। বর্তমানে ই-কমার্স খাত কিছুটা টালমাটাল অবস্থায় বিরাজ করছে। এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পণ্যের যোগান, দ্রুত ডেলিভারি, এবং ন্যয্য মূল্যে পণ্য বা সেবা সুনিশ্চিত করতে পারলে দুরাবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এবং আমি মনে করি, ই-কমার্স এর বর্তমান অবস্থা দূর করে একটি স্বচ্ছ ও সঠিক সেবা সুনিশ্চিত করতে আমরা অগ্রনী ভুমিকা পালণ করবো। 

ইত্তেফাক: ই কমার্সে আপনারা কি ভিন্নতা নিয়ে আসবেন?

দেওয়ান কানন: আমি আগেও বলেছি, আমাদের ব্যবসার মূল নীতি হলো গ্রাহক কে “স্বচ্ছ পণ্য ও সেবা প্রদান” করা। তারই ধারাবাহীকতায়, আমরা মূলত ফোকাস করবো,ফাস্টেস্ট ডেলিভারি- যেখানে গ্রাহক দ্রুত সময়ে পণ্য বা সেবা এভেইল করতে পারবে। অথেন্টিক প্রোডাক্ট- যেখানে গ্রাহক শতভাগ আসল পণ্য বা সেবা ন্যায্য মূল্যে পাবে। ক্যাশ অন ডেলিভারি- যার দরুন গ্রাহক পণ্য বা সেবা পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ এর সুযোগ পাবেন। এবং আমরা কাস্টমারকে বেস্ট পজেটিভ এক্সপেরিয়েন্স দিতে সর্বদা বদ্ধ পরিকর থাকবো

ইত্তেফাক: রিটেইল চেইন শপের বিষয়ে আপনার বেশ আগ্রহের কথা আমরা জানতে পেরেছি।

দেওয়ান কানন: রিটেইল চেইন নিয়ে আমি গত ৬ বছর এর মতো কাজ করছি। এই সেক্টরে আমার ব্যাক্তিগত একটা পেশন সব সময় ই কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহীকতার ডিএক্সটেল নামে শাওমির অফিসিয়াল রিটেইল বিজনেস নিয়ে কাজ করা। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪৪ জেলায় আমাদের ব্যাপ্তি রয়েছে এবং বাংলাদেশের লার্জেস্ট এক্সক্লুসিভ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড আউটলেট  চেইন আমাদের দখলে। গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছুটা ভিন্ন ধারার এক্সপেরিয়েন্স দিতেই মূলত আমার এই রিটেইল বিজনেস এর দিকে ড্রাইভ করা। তারই সুবাদে ডিএক্সটেল থেকে গ্রাহক সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমরা প্রতিটি অফিসিয়াল শাওমি স্মার্টফোন এর সাথে উপহার, ক্যাশলেস পেমেন্ট ও ই এম আই সুবিধায় স্মার্টফোন এবং এক্সেসরিজ বিক্রি করে আসছি।

ইত্তেফাক: লাইফস্টাইল ইকোসিস্টেম নিয়ে আপনি কাজ করছেন। মোবাইল ফোন, একসেসরিজ, ফুড, ই-কমার্স, সলিউশন সার্ভিস, রিটেইল চেইন শপ, ফার্মাসি ইত্যাদি। এগুলো সমন্বয় করছেন কিভাবে?

দেওয়ান কানন: আমাদের ব্যবসার প্রয়াস এর ধারাবাহীকতায় মোবাইল ফোন, একসেসরিজ, ফুড, ই-কমার্স, সলিউশন সার্ভিস, রিটেইল চেইন শপ, ফার্মাসি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে আমরা একজন গ্রাহক এর দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি চাহিদা পূরণ করার জন্য, কাজ করে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমার প্রতিটি বিজনেস কন্সার্ন এর অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা টিম আমাকে সর্বাত্বক সহায়তা করছে। যার দরুন সব গুলো বিজনেস সমন্বয় করতে আমাকে খুব বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে।

ইত্তেফাক/আরকে