শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইউক্রেনের অর্ধেক দখল করে রাশিয়ার কী লাভ

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১২

আবারও বিশ্বশক্তির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ইউক্রেন সংকট। ২০১৪ সালেও ইউক্রেনের ক্রিমিয়া নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। সেবার রাশিয়ার পরোক্ষ সহযোগিতায় মূল ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ। তবে, এবার সংকটের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। একইসঙ্গে ভয়াবহও। হয়তো রাশিয়ার আগ্রাসনে বিচ্ছিন্ন হতে পারে ইউক্রেনের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল। তবে এই আগ্রাসন ডেকে আনবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকিও।

ইউক্রেনের ম্যাপের দিকে তাকালে দেখা যাবে, দেশটির উত্তরে বেলারুশ, উত্তর-পশ্চিমে পোলান্ড, পশ্চিমে রোমানিয়া, দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন হওয়া ক্রিমিয়া ও কৃষ্ণ সাগর, দক্ষিণ-পূর্বে অ্যাজভ সাগর এবং পুরো পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ঘিরে আছে রাশিয়া। রুশ-ইউক্রেন সীমান্তের প্রায় পুরোটাজুড়েই এবার সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছেন পুতিন।

রাশিয়ার সেনা

মার্কিন গণমাধ্যমগুলো আশঙ্কা করছে, প্রায় পৌনে দুই লাখ সেনা নিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে পারেন পুতিন। ইতোমধ্যেই প্রায় এক লাখ সেনা সীমান্তে জড়ো হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোর মতে, আগামী জানুয়ারির শেষ নাগাদ আক্রমণ চালানোর পূর্ণ প্রস্তুতিতে পৌঁছে যাবে রাশিয়া।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অলেক্সি রেজনিকভও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমাদের গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে, তাও ভেবেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বড় আক্রমণের আশঙ্কা আছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টও ইউক্রেন সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখন একটা জিনিস চিন্তা করতে হবে। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ইউক্রেন কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। তখন রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে ইউক্রেন। ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টাও করে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া অঞ্চল হারানোর পর ন্যাটোর সদস্য হতে কোমর বেঁধে নেমেছে দেশটি। সে বছরের ২৩ ডিসেম্বর জোট নিরপেক্ষ অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে ত্যাগ করে ইউক্রেন। এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছিল রাশিয়া। ২০১৮ সালে ইউক্রেনকে অ্যাস্পিয়ারিং মেম্বার করে ন্যাটো। ২০২১ সালের শুরুর দিকে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গ ঘোষণা করেন, ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য ইউক্রেন এখন ক্যান্ডিডেট।

স্যাটেলাইট ফটোতে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ

এরপরই এপ্রিল মাস থেকে ধীরে ধীরে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ শুরু করে রাশিয়া। কারণ ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয় তাহলে তা রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যতে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ, সদস্যদেশগুলোকে সবসময়ই সামরিক সহায়তা দেয় ন্যাটো। এগুলোতে সামরিক স্থাপনাও বসানো হয়। ইউক্রেনে ন্যাটোর সেনা, সামরিক স্থাপনা ও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বসানোর মানে হচ্ছে রাশিয়া তখন ২৪ ঘণ্টাই আতশকাঁচের নিচে থাকবে। বিভিন্ন কারণে মন চাইলেই পুতিনকে হুমকি দিতে পারবে ন্যাটো, এমনকি সামরিক চাপ দিয়ে রাশিয়াকে বৈশ্বিক কর্তৃত্ব থেকে সরিয়েও দেওয়া হতে পারে।

রাশিয়ার সেনা

সুতরাং পুতিন কখনোই রাশিয়ার এত কাছে ন্যাটোর উপস্থিতি বরদাস্ত করবেন না। তবে এই কারণ ছাড়াও ইউক্রেন সীমান্তে সেনা জড়ো করার আরেকটা কারণ থাকতে পারে। ইউক্রেনের প্রায় মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ডিনিপার নদী। রাশিয়া যদি ইউক্রেন আক্রমণ করে তাহলে এই নদী পর্যন্ত তারা এগুনোর চেষ্টা করবে। কারণ এটা না করলে তারা দখলকৃত ভূমি ধরে রাখতে পারবে না। আর এই নদী থেকেই ক্রিমিয়ার কৃষিকাজ ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পানি যেতো। ২০১৪ সালে বিচ্ছিন্নতার পর বড় বাঁধ তৈরি করে ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ইউক্রেন। ক্রিমিয়ায় লম্বা খরা চলছে। এই খরা কাটাতে হলেও ডিনিপার নদী পর্যন্ত এগিয়ে যেতেই হবে রাশিয়ান সেনাকে। 

ইত্তেফাক/সাকিব/এনই/