শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ধর্ষণ রুখে দিতে ‘বাঁচাও’ অ্যাপ 

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৫৭

রাজধানীর গুলশানের নিজ এলাকায় বখাটের দ্বারা হেনস্থার  শিকার হয়েছিলেন তাবাসসুম মেহনাজ (ছদ্মনাম)। আশপাশে কেউ না থাকায় চিৎকার করে সাহাঘ্যও চাইতে পারেননি তিনি। কিন্তু তার সঙ্গে ছিল বাঁচাও অ্যাপ। নিজের মোবাইলে থাকা বাঁচাও অ্যাপে অ্যালার্ট বাটনে ক্লিক করার পর ছুটে আসেন বান্ধবী, তার ছোট ভাই ও আশপাশের মানুষজন। পরে তাদের সহায়তায় সেখান থেকে উদ্ধার হন তিনি।

শুধু গুলশান কিংবা বনানী নয়, দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে একজন নারী বাঁচাও অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্ষণ, উত্ত্যক্তকরণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন মোবাইলের প্লে স্টোর থেকে ‘বাঁচাও’ অ্যাপটি ইনস্টল করে রাখার। পরে বিপদে পড়লেই অ্যাপটির ‘রেপ অ্যালার্ট’ বাটনে ক্লিক করলে সে বার্তা পৌঁছে যাবে আশপাশে ‘বাঁচাও’ ইনস্টল করে রাখা মানুষের স্মার্টফোনে। অ্যালার্ট পেয়ে এক জন নারীকে যে কেউ সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে পারে।

বাঁচাও ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ অ্যাপটি নিয়ে এসেছে। গত অক্টোবরের ২ তারিখ অ্যাপটি ডাউনলোড করার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে এ পর্যন্ত দেড় লাখেরও বেশি মানুষ তা ডাউনলোড করেছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা।  এর পরেই রয়েছেন চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। বাঁচাও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল আহমেদ জানান, কোনো নারী যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন, যা ধর্ষণের ঘটনায় মোড় নিতে পারে, তখন এই অ্যাপটির মাধ্যমে তিনি সহায়তা চাইতে পারবেন।  নারীরা যাতে প্রয়োজনের সময়, বিশেষ করে ধর্ষণ থেকে নিজেদের রক্ষায় সহায়তা চাইতে পারে, সেজন্য ‘বাঁচাও’ নামে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। গত আগস্টে সীমিত আকারে অ্যাপটি চালু করা হয়৷ ২ অক্টোবর থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

জালাল আহমেদ বলেন, ‘৮০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনাই নারীটির আশপাশের কোনো স্থানে ঘটে এবং সেটা তার আবাসস্থল থেকে বেশি দূরে হয় না। আমরা দেখেছি, একমাত্র সমাজের সবাই এগিয়ে এলেই ধর্ষণ ঠেকানো সম্ভব, কারণ তারাই দ্রুত ঘটনাস্থলে  যেতে পারে।

এ অ্যাপ ব্যবহার করছেন এমন এক জন রুমাইয়া রাহীন। তিনি বলেন, অ্যাপটি নারীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আমরা যখন কোনো আকস্মিক বিপদে পড়ে যাই তখন আশপাশের অপরিচিত মানুষজন এগিয়ে আসতে চায় না। কারণ তারা প্রয়োজন মনে করে না। কিন্তু অ্যাপটির মাধ্যমে আমি জানিয়ে দিতে পারি আমার সহযোগিতা প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, এক দিন ১০ জন বখাটে আমার পিছু নিয়েছিল। আমার এখন মনে হয়, তখন যদি বাঁচাও থাকত!

বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা অর্ধেক কমিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে ধর্ষণের সংখ্যা দিনে ১৭ জন থেকে আট জনে নামিয়ে আনতে চাই। এটা ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ। আমরা ৬৪ জেলাতেই কাজ করছি এবং প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি৷ ২০২২ সালের মধ্যে ধর্ষণের বিশ্ব র্যাংকিংয়েও বাংলাদেশের অবস্থানকে আমরা ওপরে তুলতে চাই।

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন