বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তি উপলক্ষে দিল্লীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন। দিল্লীর সেই অনুষ্ঠান শেষে অতীতের স্মৃতির সন্ধানে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) ত্রিপুরায় ছুটে যান তিনি।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা যে সব জায়গায় ছিলেন সেই জায়গাগুলো ঘুরে দেখেন। এছাড়াও সিপাহীজলা জেলার বক্সনগর সীমান্ত এবং তৎকালীন মহকুমা শাসকের অফিসটি ঘুরে দেখেন। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সংসদ সিমিন হোসেন রিমি সাবেক মহকুমা শাসকের বড়দোয়ালী এলাকার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন এবং তার লেখা কিছু বই উপহার হিসেবে তুলে দেন।
যুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলোতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে তাজউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ত্রিপুরায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন তারা সীমান্ত পেরিয়ে শরণাপন্ন হয়েছিলেন ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ার পদ্মশ্রী মহকুমাশাসক হিমাংশু মোহন চৌধুরীর কাছে। তিনি পরম যত্নে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুরো বাংলাদেশেই তখন অস্থির পরিস্থিতি। বাবা তাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অতি ঘনিষ্ঠ বিপ্লবী এবং মুক্তি যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তাই যুদ্ধের সময় অনাহার অর্ধাহারে চার শিশু কিশোর ভাই বোন ও মা সৈয়দা জোহরার আত্মগোপন করেই দিনকাটতো।
ত্রিপুরা থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে তাদেরকে নিয়ে ত্রিপুরায় এসে পৌঁছান তাদের মা জোহারা। তারা যখন বক্সানগরের কাছে পৌঁছান, তখন বৃষ্টির মতো গুলি চলছিল। দুই দিন ধরে অনাহারে ছিলেন, ভেবেছিলেন তারা ক্রসফায়ারে পড়বে আর বাঁচবেন না। এসময় ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ার পদ্মশ্রী মহকুমাশাসক হিমাংশু মোহন চৌধুরীর তাদের আশ্রয় দেন।
নাম মনে না থাকলেও স্মৃতির পাতা থেকে এখনো তিনি মুছে ফেলতে পারেননি। তাই ত্রিপুরায় ছুটে এসেছেন এবং যে মহান ব্যক্তি তাদেরকে যত্নসহকারে রেখেছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে।