বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনন্য গাঁথা মুক্তির গানের চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক লিয়ার লেভিন বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমেরিকানরা কেউ কাজ করার পর কে কাজটি করেছিল প্রয়োজন শেষে ভুলে যায়। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যেভাবে মনে করে যাচ্ছে তাতে আমি অভিভূত।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ সপ্তাহ ৭২ ঘণ্টা তথ্যচিত্রের ভিডিও ধারণ করার পর লিয়ার লেভিন ভারতে গ্রেফতার হন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তাকে ভারত এবং বাংলাদেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ কারাবাস শেষে সহকর্মীসহ লিয়ার লেভিনকে ভারত ত্যাগ করতে হয়। ৭২ ঘণ্টায় থেমে যায় মুক্তির গানের মত দুর্লভ ভিডিওচিত্র। তার তৈরি ‘জয়বাংলা’ তথ্যচিত্র আজও আলোর মুখ দেখেনি।
অনুষ্ঠানের আরেকজন অতিথি নিউইয়র্ক সফররত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ আমরা বলে থাকি বিশ্বের অন্যতম সেরা ভাষণ। কিন্তু আমি মনে করি, বিশ্বের ইতিহাসে স্বাধীনতার পক্ষে সাধারণ মানুষের পক্ষে এর চেয়ে অনন্য ভাষণ আর নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আমি মনে করি- এটি স্বাধীনতারও শতবর্ষ। কারণ বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।
বহির্বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী লেখালেখি করার মানুষদের নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রবাসী বলে কিছু নেই। আমি মনে করি আমরা সবাই বিশ্ব বাঙালি। বাংলা ভাষার যেকোনো লেখককে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে গুণগত মানের বিবেচনায় দেখা উচিৎ।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সউদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আহমাদ মাযহার।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বিশ্বজিত সাহার পরিচালনায় দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানের শেষে ছিল সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক ও লেখক সাঈদ-উর রব এবং কবি ফকির ইলিয়াস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লিয়ার লেভিন ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে পুষ্পস্তবক প্রদান করেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক লেখক আদনান সৈয়দ এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য জাকিয়া ফাহিম।