মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উদ্যোক্তারা শঙ্কায়, ঋণের কিস্তি শোধে আরও সময় চান

আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:১৫

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাতকে কিছুটা নীতিসুবিধা দিতে খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের কিস্তি শোধ না করলেও কোনো গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না—এমন নির্দেশনায় উদ্যোক্তাদের নাভিশ্বাস কিছুটা কমেছে। কিন্তু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, কনটেইনার সংকট, জ্বালানির অপ্রতুলতা প্রভৃতি কারণে উদ্যোক্তারা ধরাশায়ী হয়ে আছেন। এ অবস্থায় সম্ভাব্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনো ধরা দিচ্ছে না।

ফলে, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। তাই তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধে আরো সময় চান। পরবর্তী তিন বছরের জন্য এই সুবিধা দাবি করে উদ্যোক্তাদের অনেকেই বলেছেন, মধ্যমেয়াদি এই নীতিসহায়তা বেসরকারি খাতকে গতিশীল করতে সহায়ক হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা দেনদরবার করছি। সময় বাড়িয়ে দিতে দাবি তুলেছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময়সীমা শিথিল তথা বৃদ্ধি করা জরুরি।’ তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। কিন্তু করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্ব জুড়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তদুপরি, কাঁচামালের ঊর্ধ্বগতি, দুর্বল লজিস্টিকের কারণে অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ অবস্থায় কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ালে উদ্যোক্তাদের মানসিক চাপ কিছুটা কমবে।

প্রসঙ্গত, করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে বাড়ালেও চলতি ডিসেম্বরে এই সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে, দাবি জোরালো হচ্ছে এবং দ্রুত ঘোষণাই চাইছেন ব্যবসায়ীরা। সবাই এখন চিন্তিত, সময় না বাড়ালে খেলাপি হওয়ার বিকল্প থাকবে না। তাতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তা সার্বিক অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর হবে। দেশে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণও বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যবসা বন্ধ কিংবা কিস্তি প্রদান না করলেও সুদের চাকা কিন্তু বন্ধ নেই। এটা ঠিকই চলমান রয়েছে। তাছাড়া, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ প্রভিশন করে লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ট ঘোষণা করছে। কাজেই, ব্যাংক অনাদায়ি কিস্তি (সুদসহ) ও আরোপিত সুদ যোগ করে পুনরায় আসল হিসেবে ধরে নিয়ে করে কিস্তি পুনর্নির্ধারণ করবে। তখন বেশির ভাগ উদ্যোক্তার পক্ষেই কিস্তি পরিশোধ করা তার সক্ষমতাই বাইরে চলে যাবে। একরকম বাধ্য হয়েই খেলাপির পথে হাঁটতে হবে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন অর্থনীতিবিদরাও। অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, গত দুই-আড়াই বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এখন আবার ওমিক্রনের আঘাত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এটি সহজেই অনুমেয় যে, উদ্যোক্তারা কিস্তি পরিশোধ করতে সমর্থ হবেন না। বরং ব্যাংকের চাপ থাকলে গ্রাহক মানসিক বিপর্যয়ে পড়বেন এবং নিশ্চিতভাবেই খেলাপি হতে বাধ্য হবেন। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি নীতিকৌশলের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। নইলে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ সুফল দেবে না।

এদিকে, পদ্ধতিগত কিংবা পরিস্থিতির কারণে কোনো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়ে গেলে সচল অন্য প্রতিষ্ঠানও সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। করোনাকালীন এই অন্যায্য নিয়ম বাতিলেরও দাবি রয়েছে। কোনো গ্রুপের সহযোগী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি হিসাব একটি ব্যাংকে শ্রেণিবিন্যাসিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ব্যাংকে ‘২৭কক’ ধারার ৩ নম্বর উপধারার বিধান অনুযায়ী কোনো রকম আর্থিক সহায়তা না করার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানায়। ফলে, ঐ গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খেলাপি না হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌক্তিক কারণে সাময়িক খেলাপি হওয়ায় ঐ গ্রুপের অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান খেলাপি না হওয়া সত্ত্বেও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।

অন্যদিকে, শতভাগ রপ্তানিযোগ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পুনঃ তপশিলকৃত ঋণস্থিতির সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট জমা দিতে হয়। ফলে, সরকারের দেওয়া সুযোগের আওতায় শতাংশ ডাউন পেমেন্টের ভিত্তিতে ঋণ পুনঃ তপশিল করেও কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্টের সাড়ে ৭ শতাংশ জমা দিতে না পারায় ব্যবসা পুনরায় শুরু করতে পারছে না। কাজেই পুনঃ তফসিল করা সত্ত্বেও কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্টের টাকা জমা দিতে না পারায় তারা পুনরায় ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।  

 

ইত্তেফাক/ইউবি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন