গরু কিনে দেওয়ার কথা বলে কিশোরগঞ্জে নিয়ে ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দীনকে (৬৫) হত্যা করেন মুয়াজ্জিন জাকির হোসেন| এরপর তিনি তাবলিগে গিয়ে বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপন করেন| হত্যার ২ মাস ২০ দিন পর লক্ষ্মীপুরর থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৪|
তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান| নিহত রমিজ উদ্দিন ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন| ২০০৬ সাল থেকে রমিজ উদ্দিন গরু কেনাবেচার ব্যবসা করতেন|
র্যাবের কর্মকর্তা জানান, গত ৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ থানার কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া এলাকায় খুন হন গরু ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দীন| এ ঘটনায় তার ছেলে বাদি হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন| এরপর র্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে| ঘটনার প্রায় ২ মাস ২০ দিন পর ঘাতককে গ্রেফতার করেছে র্যাব| নিহত রমিজ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী|
র্যাব জানায়, রমিজ উদ্দীন ২০০৬ সালে দেশে আসেন| গরুর খামার রয়েছে তার| তারই এলাকার একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন জাকির হোসেন| তার বাড়ি নেত্রকোনা| মুয়াজ্জিন জাকির জানতেন রমিজ উদ্দীন অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক|
তার টাকা হাতিয়ে নিতে জাকির জানান, তাদের এলাকায় কম দামে গরু পাওয়া যায়, সেখান থেকে গরু কিনে ব্যবসা করলে রমিজ উদ্দীন আরও লাভবান হবেন| গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুয়াজ্জিনের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে রমিজ উদ্দীন ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেন| গত ২ অক্টোবর রাতে রমিজকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং পরে বড়পুল এলাকায় যান জাকির| সেখান থেকে রিকশায় তারা কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যান এবং নির্জন এলাকায় অবস্থান নেন| মুয়াজ্জিন জাকির গাড়িতে করে সেখানে গরু নিয়ে আসবে বলে রমিজকে জানান| তারা সেখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে থাকেন| রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে রমিজ উদ্দিনকে কৌশলে ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নিয়ে যান জাকির| সেখানে নিয়ে রমিজের মাথায় হতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন তিনি| আঘাতে রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপাল, মুখ, বাম চোখের ওপরে-নিচে ও মাথার বিভিন্ন স্হানে আরো আঘাত করেন জাকির| পরে তিনি রমিজের ৬ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান|
খন্দকার আল মঈন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর জাকির প্রথমে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে যান এবং নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন| ফজরের আজানের সময় হলে তিনি মসজিদে গিয়ে আজান দেন, নামাজে অংশগ্রহণ করেন এবং মক্তবে ২০ জন ছাত্রকে আরবি পড়ান| তখনো এলাকায় রমিজ উদ্দীনের মৃত্যুর খবর কেউ জানতে পারেনি| মুয়াজ্জিন তার সাধারণ রুটিন অনুযায়ী চলাচল করতে থাকেন| কিন্তু ৩ অক্টোবর সকালে রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে জাকির হোসেন ভয় পেয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে নরসিংদীর মাধবদীতে আত্মগোপন করেন| সেখানে কয়েক দিন থাকার পর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ এবং সিলেট থেকে পুনরায় ময়মনসিংহে এসে আত্মগোপনে থাকেন| পরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার একটি মসজিদে আসেন এবং সেখান থেকে চিল্লায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতী উপজেলায় যান| সেখান থেকে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে|
গ্রেফতারকৃত জাকির র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানান, রমিজকে হত্যার পর তার ৬ লাখ টাকা নিয়ে যান জাকির| এর মধ্যে ১ লাখ টাকা খরচ করে বাকি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে রেখেছেন তিনি| তার রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করেছে র্যাব|