বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রামপুরায় বাসে আগুন দিয়েছিল কেন 

আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২০

সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির লক্ষ্যে রাজধানীর রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছিল একটি কুচক্রী মহল। অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত এমন চারজনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর রামপুরা ও কুমিল্লা অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ঘটনার অন্যতম হোতা মনির হোসেন (৫৪), মো. হৃদয় হাসান পারভেজ (১৯),  মো. আলাউদ্দিন সিফাত (২৫) ও মো. নাঈম হাসান মীর (২৪)।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ নভেম্বর রাজধানী রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে অরাজকতা তৈরির অপচেষ্টা করা হয়। এ সময় চলমান শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যুকে উসকে দিতে অপপ্রচার চালানো হয়। ঘটনার পর বাংলাদেশ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা সহিংসতার পেছনের কারণ উৎঘাটনে নিবিড়ভাবে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত, বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণে ও তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের সনাক্ত করতে সক্ষম গোয়েন্দারা। পরবর্তীতে র‌্যাব ফোর্সেস ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ অভিযান পরিচালনায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আটককৃতরা

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‍্যাবকে জানায়, মনিরের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় রামপুরায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত হয়। রামপুরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো দেশব্যাপী একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের। তারা জানতে পারে গাজীপুরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামপুরায় সম্ভাব্য উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ওই ঘটনাকে ব্যবহার করে তারা রামপুরার বিটিভি ভবন এলাকায় সম্ভাব্য নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেফতার মনির নাশকতা সংগঠনের জন্য আলাউদ্দিন ও নাঈমসহ আর ৪/৫ জনকে নির্দেশনা দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আলাউদ্দিন ও হৃদয়সহ আরও ৩/৪ জনকে বোতলে ভর্তি অকটেন সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গ্রেফতার নাঈম অগ্নিসংযোগকারী দল, সন্ত্রাসী ও হামলাকারী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে। ঘটনার সংগঠনে চক্রের বিশ্বস্ত ১৫ থেকে ২০ জনকে অগ্নিসংযোগ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গ্রেফতাররা সুপরিকল্পিতভাবে গাজীপুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামপুরায় ঘটতে যাওয়া সম্ভাব্য ঘটনাকে ব্যবহার করে নাশকতার পরিকল্পনা করে। মূলত এই চক্রটি চলমান শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যু অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে নাশকতার জন্য প্রস্তুত ছিল।

গ্রেফতাররা পরিকল্পনা অনুযায়ী রামপুরায় বিটিভি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা সাদ্দামের গাজীপুর থেকে রামপুরায় পৌঁছানোর বিষয়টি জানতে পারে। এর মধ্যে তারা বাসের নাম জেনে নেয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নাশকতাকারীর সহযোগীরা অবস্থান নিয়ে বাসটি আসার আগাম তথ্য দেয়। বাসটি রামপুরার বিটিভি ভবনের সামনের এলাকা অতিক্রমকালে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এর ফলে অনাবিল বাসের চালক ও হেলপার সম্ভাব্য হামলা আঁচ করতে পেরে বেপরোয়া গতিতে রামপুরা ত্যাগ করতে যায়। বাসটি ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার অতিক্রম করার পর সাদ্দাম ও তার শ্যালক বাসটি পলাশবাগে থামাতে চেষ্টা করে। একপর্যায়ের সাদ্দামের শ্যালক নিহত মাঈনউদ্দিন বাসে জোরপূর্বক উঠতে গেলে বাসের হেলপার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এমন সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মাঈনউদ্দিন মৃত্যুবরণ করে।

বাসে যারা আগুন দিয়েছিলো

তখন সুযোগ সন্ধানীরা শিক্ষার্থী নিহত বলে প্রচারণা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে উত্তেজনা ছড়ায়। একইসঙ্গে তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তায় চলমান বাস ও অন্যান্য যানবাহনে অকটেন ঢেলে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতাররা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ নাশকতা দলের অন্যতম হোতা মনিরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ নাশকতার ৭টি মামলা রয়েছে। সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের একজন এজেন্ট। সে রামপুরার বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটনার অন্যতম সংগঠক ও পরিকল্পনাকারী। তার নির্দেশনায় গ্রেফতাররা রামপুরায়  নাশকতা সৃষ্টিতে নানাবিধ দায়িত্ব পালন ও স্ব-শরীরে অংশগ্রহণ করে নাশকতা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয় ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

গ্রেফতার আলাউদ্দিন তার নিজ গ্যারেজসহ আরও কয়েকটি স্থানে বোতল ভর্তি অকটেন মজুদ রাখে ও সরবরাহ করে। গ্রেফতার হৃদয় সশরীরে বাসে অগ্নিসংযোগ করে। গ্রেফতার নাঈম বিভিন্ন গ্রুপগুলোর ভেতরে সমন্বয় করে।

রাষ্ট্রবিরোধী এই ষড়যন্ত্রকারীদের যোগসাজশে রামপুরাস্থ সিন্ডিকেটটি সুযোগ সন্ধানী অপতৎপরতা চালিয়ে ধ্বংসাত্মক ও  জানমালের ক্ষতিসাধন, নাশকতা বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরির উদ্যোগ নেয়।

 

ইত্তেফাক/এসআই/কেএইচ