শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নিম্নআয়ের মানুষদের সঙ্গে অভিনব প্রতারণা করতো চক্রটি

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৩২

দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র সাধারণত গার্মেন্টস, কারখানা, ড্রাইভার, সিএনজি চালক, গৃহকর্মীর মতো নিম্নআয়ের কর্মজীবীদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছিল। অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ব্যবহার করে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস খুলে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। ইতিমধ্যে চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করেছে।

তাদেরকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে বর্তমান বেতনের ২/৩ গুন বেতনের আশ্বাস দিতো। এছাড়া স্বল্প খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর লোভও দেখাত। এই চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভেদে ২.৫-৩.৫ লক্ষ টাকা খরচ বলে উল্লেখ করত। তন্মধ্যে দেশ ভেদে প্রাথমিক পর্যায়ে ১-২ লাখ টাকা নিতো। বাকী অর্থ ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিতো। 

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর ভাটারা ও বারিধারায় অভিযান পরিচালনা করে এ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ২ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ( র‍্যাব)।

এসময় তাদের কাছ থেকে ১৩৮টি পাসপোর্ট, ৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ৫০,০০০/- টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা মো. সুজন শেখ (৩৯) ও মো. আমিনুল ইসলাম রনি (৪৮)।

জব্দকৃত পাসপোর্ট

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে কাওরানবাজার র‍্যাব এর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র‌্যাবের কাছে এমন অভিযোগ দেয়। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য।  সুজন শেখ এ চক্রের মূল হোতা এবং আমিনুল ইসলাম তার অন্যতম সহযোগী। তারা গত ২ বছর যাবৎ প্রতারণার সাথে জড়িত বলে জানায়। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। যারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করেছে। চক্রের সদস্যরা সাধারণত গার্মেন্টস, কারখানা, ড্রাইভার, সিএনজি চালক, গৃহকর্মী ইত্যাদি শ্রেণীর কর্মজীবীদের টার্গেট করত।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। তাদেরকে প্রবাসে বর্তমান বেতনের ২/৩ গুন বেতনের আশ্বাস দিত। এছাড়া স্বল্প খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখাত। ব্যাংকের লোনের ব্যবস্থা পুরোটাই মিথ্যা বানোয়াট ও ভুয়া। এভাবে তারা নিরীহ সাধারণ মানুষ হতে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

গ্রেফতারকৃতরা বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনে কোনো কোনো গ্রাহককে অন্য এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণ করত। কিন্তু যেহেতু তাদের নিকট যাত্রার পূর্বে কখনোই কোনো কাগজপত্র দেওয়া হতো না। অন্যদিকে গ্রাহকরা স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় তারা তা বুঝতে পারতো না। তারা কৌশলে এ সমস্ত গ্রাহকদের মাধ্যমে বা নাম ব্যবহার করে প্রচারণা করত।

ইত্তেফাক /কেএইচ