শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যশোরে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে হালকা প্রকৌশল খাত

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০২:০২

করোনা-পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু লোহাসহ কাঁচামালের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি আর চাহিদা কমে যাওয়ার মধ্যে বিপাকে পড়েছে হালকা প্রকৌশল শিল্প। নতুন রপ্তানিপণ্য হিসেবে গুটি গুটি পায়ে এগোনোর মুখেই বড় রকমের হোচট খেল সম্ভাবনাময়ী শিল্পটি।

রপ্তানি সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য হাল্কা প্রকৌশল পণ্যকে ২০২০ সালের ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণা করা হয়। এতে এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তিন মাস না পেরুতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। কোভিডের হানায় গোটা বিশ্বের মতো টালমাটাল হয়ে যায় দেশ। ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার বছরেই করোনার থাবায় হোচট খান এই শিল্পের উদ্যোক্তারা।

যশোর লাইট অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মালিক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল লোহার দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫-৯০ টাকা হয়েছে। একইভাবে ৬০ টাকার প্রতিপিস প্লেনশিট ১৭০ টাকা, ৫৫-৬০ টাকার প্রতিপিস এঙ্গেল ৮০-৮৫ টাকায় ঠেকেছে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।

যশোর লাইট অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মালিক সমিতির সদ্যবিদায়ি (৩১ ডিসেম্বর দায়িত্ব হস্তান্তর) সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বাবু বলেন, ভারত-চায়না থেকে আগে পাথরভাঙা মেশিন আসত বাংলাদেশে। তাদের প্রতিষ্ঠান রিপন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে তৈরি সেই পাথরভাঙ্গা মেশিনই ভারতে রপ্তানি শুরু করেন তারা। দেশেও প্রচুর চাহিদা ছিল এই মেশিনের। কিন্তু আদালতের আদেশে পাথর তোলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে মেশিনের চাহিদা আর নেই। আবার বর্তমানে ভারত থেকে আগে আস্ত পাথর দেশে আসার পর ভাঙা হতো বলে এখানেও মেশিন দরকার হতো। কিন্তু ভাঙা পাথর দেশে আমদানির পাশাপাশি ভারতে মেশিনের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এখন তা এখানে উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রায় এক হাজার ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ ফাউন্ড্রি শিল্প রয়েছে। প্রায় ৩ লাখ মানুষ এবং উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের ফাউন্ড্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। মূলত ঢাকা, বগুড়া ও যশোর জেলায় ফাউন্ড্রি শিল্প অবস্থিত। যশোরে আধুনিক বৃহৎ আকারে এ শিল্প স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ফাউন্ড্রি শপ বা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপগুলোতে প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে শুধু গাড়ির পার্টসই উৎপাদিত হয় শতাধিক ধরনের। যার মধ্যে গাড়ির ব্রেকড্রাম, পেসারপ্লেট, গিয়ারবক্স, ব্রেকডিস্ক, ইঞ্জিন হাউজিং, হ্যাঙ্গার, গিয়ার বক্সের বডি অন্যতম। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দাম এসব পার্টসের।

এখানকার সবধরনের গাড়ির ড্রাম যাচ্ছে সারা দেশে। এছাড়া শিল্প ও ওয়ার্কশপ মেশিনারি, অটোমোবাইল, স্পেয়ার পার্টস, কৃষি যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ, লৌহঘটিত ও অলৌহঘটিত কাস্টিং পণ্য, ছাঁচ ও ডাই, নির্মাণ যন্ত্রপাতি, জুট, রাইস ও সিমেন্ট মিলের খুচরা যন্ত্রাংশ, জাহাজ ও ফিশিং ট্রলারের খুচরা যন্ত্রাংশ, মুদ্রণ ও প্যাকেজিং যন্ত্রপাতি, মেশিন ও সরঞ্জামের প্রায় সব বিভাগের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ, রুটি-বিস্কুট কারখানার যন্ত্রপাতি, পশুর ফিড কারখানার যন্ত্রপাতি, ময়দা কল যন্ত্রপাতি, নলকূপ, চা বাগান ও কারখানার যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল কারখানার খুচরা যন্ত্রাংশ প্রভৃতি উৎপাদিত হয় এখানকার কারখানায়।

যশোর লাইট অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মালিক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের উৎপাদন ধরনেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। দেশে এখন ধান লাগানো, ধান কাটা মেশিনসহ কৃষির যান্ত্রিকীকরণের মেশিনের চাহিদা বাড়ছে। বিভিন্ন শিল্পের খুচরা যন্ত্রাংশের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। তবে সবার আগে লোহা ও লৌহজাত সামগ্রীর মূল্য কমানোর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাই।

ইত্তেফাক/এমআর