জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জেরে কাজাখস্তানে চরম বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে দেশটির সরকারের পতন ঘটেছে।
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, বুধবার (৫ জানুয়ারি) দেশটির প্রধানমন্ত্রী আসকার মমিনের নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ।
গত কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভ-প্রতিবাদে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রাশিয়ার কাছে সহায়তা চান প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা ব্লকের কাছে তিনি সহায়তা চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশনের এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ বলেন, কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অরগ্যানাইজেশনের (সিএসটিও) প্রধানদের কাছে আজ আমি সহায়তা চেয়েছি। এই সন্ত্রাসী হুমকি কাটিয়ে উঠতে কাজাখস্তানকে সহায়তার আহ্বান জানাচ্ছি।
মূলত সিএসটিও নিরাপত্তা জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে মস্কো। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আরও পাঁচটি দেশ এই সংগঠনের সদস্য।
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা সরকারের পতন দাবি করে। এরপরেই প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।
ইন্সট্রাগ্রামের কাযাখ ব্লগার নামে এক আইডিতে লাইভ ভিডিওতে দেখা যায় আলমাটি শহরে মেয়রের ভবনে আগুন জ্বলছে। এর পাশেই শোনা যাচ্ছিলো বন্দুকের গুলির যাচ্ছিলো।
অনলাইনে পোস্ট করা আরও ভিডিওতে প্রসিকিউটরের কার্যালয়ও পুড়তে দেখা গেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্ডন ভেঙ্গে দিতে দেখা গেছে যদিও পরবর্তীতে সেখানে স্টান গানের বিস্ফোরণ পুরো শহরজুড়ে শোনা গেছে।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) রয়টার্সের সাংবাদিক দেখেন, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী আলমাটি শহরের মূল কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন বিশাল ট্রাকে। টিয়ার গ্যাস ও গ্রেনেড দিয়েও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পারেনি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
আটামেকেন, কাজাখস্তানের ব্যবসায়িক লবি গ্রুপ জানান, ব্যাংক, স্টোর এবং রেস্টুরেন্টে হামলার তথ্য জানা যাচ্ছে।
শহর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ১৯০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে ১৩৭ জন পুলিশ। শহর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাতজুড়ে উত্তরাঞ্চলীয় শ্যাঙ্কেন্ট এবং তারাজ শহরে সরকারি ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯৫ পুলিশ আহত হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২০০ জনকে আটক করেছে।
অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, আকতবে মেয়র অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ওয়াটার ক্যানন এবং স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।
দেশটিতে গত শনিবার এলপিজির দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। এরপর দিনদেশটির পশ্চিমাঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ মানজিস্তাউয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে এই বিক্ষোভ আলমাতিসহ দেশটির অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।