বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

নৌকায় সিল দেওয়া ব্যালট ভাসছে পানিতে

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:২৫

কুমিল্লার চান্দিনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পরদিন নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়া ব্যালট পেপার মৎস্য প্রজেক্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার জন্য নৌকা প্রতীক প্রার্থী সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রশাসনকে দায়ী করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে চান্দিনা উপজেলার ১ নম্বর শুহিলপুর ইউনিয়নের শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দলপাড়া হারুন মিয়াজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশ থেকে বেশ কয়েটি ব্যালট পেপার উদ্ধার করে পুলিশ, যার প্রতিটিতে নৌকা প্রতীকের ওপর সিল দেওয়া ছিল।

স্হানীয়রা জানান, সকালে শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রসংলগ্ন মৎস্য প্রজেক্টের এক শ্রমিক মরা মাছ তুলতে গিয়ে স্কুলের পেছনে বেশ কয়েটি ব্যালট পেপার ভাসতে দেখে স্হানীয়দের খবর দেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুন নাহার ও থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান ঘটনাস্হলে গিয়ে ঐ ব্যালট পেপারগুলো উদ্ধার করেন। প্রতিটি ব্যালটে নৌকা প্রতীকের ওপর সিল দেওয়া ছিল। সকাল সাড়ে ১১টায় একই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড হারুন মিয়াজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রসংলগ্ন মৎস্য প্রজেক্টে থেকে আরো চারটি ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। দুপুর দেড়টায় শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ১০০ গজ দূরত্বে একই প্রজেক্ট থেকে খাবারের প্যাকেটের ভেতরে আরো ১১টি ব্যালট পেপার পান স্হানীয়রা। সবগুলোতেই নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়া ছিল। 

ঐ ইউনিয়নের নৌকা প্রতীক প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সরকার জানান, বুধবার পঞ্চম ধাপে চান্দিনার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে শুহিলপুর ইউনিয়নে পরিষদেও ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণের শুরু থেকে আমার লোকজনকে হয়রানি শুরু করে প্রশাসন। ভোট গণনার সময় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড দলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে অন্তত সাড়ে ৩০০ ভোট পানিতে ফেলে ও বিভিন্নভাবে নষ্ট করে প্রশাসন। 

শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট পল্লী চিকিত্সক ফারুক হোসেন জানান, বুধবার ভোট গণনার সময় আমাদেরকে বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার পাশের একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর রাত ৮টায় ফলাফল ঘোষণা করেন তিনি। পরদিন সকালে কেন্দ্রের পাশে মৎস্য প্রজেক্টে নৌকার সিল দেওয়া ব্যালট পেপার ভাসতে দেখা যায়। তার অভিযোগ, মূলত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করতে নৌকা প্রতীকের ব্যালট পেপারগুলো পানিতে ফেলে দেয় প্রশাসন। 

এ ব্যাপারে শুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং ফারুকুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন ভোট গণনা করেছি তখন প্রার্থীদের এজেন্টদের সঙ্গে রেখেছি। সেখানে গোপনভাবে কিছুই করা হয়নি। আর পরদিন পানিতে কীভাবে ব্যালট পেপার পাওয়া গেল তা আমার জানা নেই। 

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আহসান হাবীব বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করবেন। 

চান্দিনা থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, সকালে আমরা ১০টি অর্ধ ছেঁড়া ব্যালট পেপার পেয়েছি। অন্য ব্যালট পেপারগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই। 

এ ব্যাপারে জানতে চান্দিনা ইউএনও আশরাফুন নাহারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

প্রসঙ্গত, চান্দিনা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনটিতে নৌকা এবং বাকি ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এর মধ্যে ১ নম্বর শুহিলপুর ইউনিয়নে ৩ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বকর ছিদ্দিক। ঐ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইমাম হোসেন সরকার পেয়েছেন ৩ হাজার ১২৫ ভোট।

 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি