শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

খোলা আকাশের নিচে ৬ শতাধিক পরিবার

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৪

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে কক্সবাজারের উখিয়ার ১৬ নম্বর শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বসতবাড়ি, লার্নিং সেন্টার, শিশু পার্কসহ ৬ শতাধিক স্থাপনা। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে আড়াই হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মানুষের। প্রচণ্ড শীতে বসতি হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েছে রোহিঙ্গারা। তবে দ্রুত রোহিঙ্গাদের শেল্টার নির্মাণ করে দেওয়াসহ সমস্যা লাঘবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। অতিরিক্ত প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে গঠন করা কমিটিতে ৮ এবিপিএন, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও সিআইসিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর ক্ষতিগ্রস্ত বসতি ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

সূত্র জানায়, আগুন লাগার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন রোহিঙ্গারা। আগুনে বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুড়ে গেছে কাপড়, আসবাবপত্র কিংবা খাদ্যসামগ্রী। সকাল না হতে আত্মরক্ষার্থে যাওয়া রোহিঙ্গারা ফিরছেন সেই বসতিতে। সেখানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন কিছু পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু আগুনে কেড়ে নিয়েছে তাদের সব সম্বল। দাঁড়িয়ে আছে বসতির পিলারগুলো। সোমবার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

৮ নম্বর এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান জানিয়েছেন, শফিউল্লাহকাটা পুলিশ ক্যাম্প-১৬ এর আওতাধীন এফডিএমএন ক্যাম্প-১৬ এর ব্লকঃ বি-১ এর রোহিঙ্গা ইলিয়াস মাঝি এবং আবুল সৈয়দ মাঝির ঘরে রান্না করার সময় চুলার আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। সাড়ে ৫টায় আগুন লাগার খবর পেয়ে উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদর হতে ৮টি ফায়ার ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। আগুনের লেলিহান শিখায় থাকার ঘর, ফায়ার ড্রাম, ওয়াটার ট্যাংক, কিচেন আইটেম, গ্যাস সিলিন্ডার, ফ্লোর ম্যাট, লার্নিং সেন্টার, শিশু পার্কসহ ৬০০ শতাধিক স্থাপনা পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক অর্ধশত কোটি টাকার অধিক পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, আগুনে ৫শতাধিক রোহিঙ্গা ও ডজনাধিক স্থানীয় বাসিন্দার ঘর পুড়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে ভাঙচুর হয়েছে আনুমানিক শতাধিক ঘর। ব্লকঃ বি-১, ব্লকঃ বি-২, ব্লকঃ বি-৩ ও সি-৩ ক্যাম্পে এ ঘরগুলো ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভুক্তভোগীদের ক্যাম্প-১৬-এর অন্তর্ভুক্ত সকল- লার্নিং সেন্টার, মাদরাসা ও মক্তব, ওমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস, আত্মীয়-স্বজন এবং পাশ্ববর্তী ক্যাম্পে রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের রাতে শুকনো খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, রিক। সকালে খাবার সরবরাহ দিয়েছে এনজিও সংস্থা এমএসআই। 

ক্যাম্পে কাজ করা তুরস্কের টিকা এনজিও’র কো-অর্ডিনেটর মো. ফারুক জানিয়েছেন, তাদের পরিচালিত রোহিঙ্গা শরনার্থী শিশুদের জন্য স্থাপিত একমাত্র শিশু পার্ক, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র, অফিস কক্ষ ও স্থাপনা পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়া বসতবাড়ী গুলো টিকা ও আফাদ এনজিও’র দেওয়া বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা নিবাসের পাশাপাশি পুড়েছে স্থানীয় ডজনাধিক বসতিও। একে তো প্রচণ্ড শীত পড়ছে। তার ওপর বসতি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় পরিবারগুলোর। শীতের কাপড়, খাদ্য ও পানি সংকটে চরম কষ্টে রয়েছেন তারা। 

আইওএম এর ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তা ঠিক করার পর সমন্বয় করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তারেক।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শামছু দ্দৌজা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তাবু। রাতের আশ্রয় তৈরির কাজ করছে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে।

উল্লেখ্য, রবিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার আগে ৫টার  দিকে ৮ এপিবিএনের আওতাধীন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৬ শফিউল্লাহ কাটা বি, সি ব্লকে আগুন লাগে। মুহুর্তে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে আগুনে পুড়ে প্রায় ৬০০টি শেড। আগুন লাগার খবর পেয়ে এপিবিএনের কন্ট্রোলরুম থেকে উখিয়া-টেকনাফ এবং কক্সবাজারের ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক মো. নাইমুল হক অর্ধশত অফিসার ও ফোর্সসহ ঘটনাস্থল এসে আগুন নেভানোতে সহায়তা করেন।

সূত্র জানায়, গত এক বছরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ২২ মার্চ রাতে উখিয়ার ৮ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে বহু বসতি পুড়ে যায় এবং ১১জন নিহত হয়েছিলেন। গত ২ জানুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে আইওএম পরিচালিত একটি করোনা হাসপাতাল ও তার পাশের কয়েকটি বসতি পুড়ে যায়। 

 

ইত্তেফাক/জেডএইচডি