শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২০ বছর ধরে পেটে কাঁচি বয়ে বেড়াচ্ছিলেন বাচেনা খাতুন

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৬

অস্ত্রোপচারের পর পেটে কাঁচি রেখে দেন চিকিৎসক। এভাবে চলে দীর্ঘ ২০ বছর। অবশেষে সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই সার্জিক্যাল কাঁচি অপসারণ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন। তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বাচেনা খাতুন। বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী।

এর আগে ৩ জানুয়ারি বাচেনার পেটে কাঁচি থাকার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মেহেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগে হইচই পড়ে যায়। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। ২০ বছর আগে অপারেশনের সময় ভুল করে বাচেনার পেটে সার্জিক্যাল কাঁচি রেখে দেওয়া হয়।

৪ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নারী সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন বাচেনা খাতুন। এরপর থেকে পেটের যন্ত্রণা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। ডায়াবেটিস পরীক্ষাসহ খাবার কিনতে কিনতে একেবারে নিঃস্ব তিনি। যে ক্লিনিক থেকে অপারেশন করা হয়েছিল সেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সব খরচ বহনের আশ্বাস দিলেও দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বাচেনা খাতুন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকসের কারণে অস্ত্রোপচার বার বার পিছিয়ে যাচ্ছিল। ডায়াবেটিকস পরীক্ষার পর আজ দুপুর ১২টার দিকে অস্ত্রোপচার শুরু হয়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট (সিনিয়র) ডা. ওয়ালিউর রহমান জানান, ৪ জানুয়ারি থেকে বাচেনা খাতুনকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকসের জন্য অস্ত্রোপচার পিছিয়ে যাচ্ছিল। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় আজ তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

২০০২ সালের ২৫ মার্চ গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন বাচেনা খাতুন। অস্ত্রোপচার করেছিলেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। অস্ত্রোপচারের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি। পেটের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় বছরের পর বছর ডাক্তারের কাছে ছুটেছেন তিনি। খুইয়েছেন অর্থ-সম্পদ। অবশেষে ২০-২৫ দিন আগে রাজশাহীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে করালে পেটে সার্জিক্যাল আরটারির সন্ধান পাওয়া যায়। এটি নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে যায়।

অস্ত্রোপচারের সময় পেটের মধ্যে সার্জিক্যাল কাঁচি রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। পুনরায় ডা. রাজার শরণাপন্ন হলে তিনি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরত পাঠান। চিকিৎসকের কাছে পাত্তা না পেয়ে বাচেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পরে আবার ডা. রাজার সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে সুস্থ হতে বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাচেনা খাতুন।

এদিকে ৫ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেহেরপুর সিভিল সার্জন জাওয়াহেরুল ইসলাম। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গাংনীর সেই রাজা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা। 

 

ইত্তেফাক/ইউবি