শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মাসব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন: সুবর্ণ-জয়ন্তী’ প্রদর্শনী

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫৭

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ণতা এনে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে কেমন আছেন-এ নিয়ে সারাদেশেই উৎকণ্ঠা ছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সারাবিশ্বের চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পা রাখেন স্বাধীন বাংলার মাটিতে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনী ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন: সুবর্ণ-জয়ন্তী’। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শতদিনের উৎসবের অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রবেশ মুখে ভাস্কর্য লবির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।

শুক্রবার সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অগ্নিকন্যা হিসেবে খ্যাত মতিয়া চৌধুরী এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী।

ছবি: ইত্তেফাক

মতিয়া চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যারা সাংবাদিকতা করছেন তাদের এ সাংবাদিকতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও ত্যাগের কথা বর্তমান ব্শ্বির অনেক দেশই জানে না। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে সম্পৃক্ত রেখে এ কাজটি করলে তা আরও কার্যকরী হবে।

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, দেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তা পূর্ণতা পায়নি। তাকে মুক্তি দেওয়ার আগেও হত্যা করবার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন গঠনের জন্যও সে সময় তাকে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজের মুক্তি বা জীবন রক্ষার জন্য হলেও কোন আপস করেননি। কারাগারে থাকলেও পাকিস্তানের এসব প্রস্তাবের কারণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

ছবি: ইত্তেফাক

বিশেষ এ প্রদর্শনীতে পঞ্চাশ বছর পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ছবির ক্যানভাসে আবারও সজীব হয়ে উঠেছে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর আটক, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্ববাসীর তৎপরতা এবং প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ২৫ মার্চ কাল রাতে বঙ্গবন্ধুর আটকের ছবি এবং বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টের আলোকচিত্র। এরপর ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঘোষণার রিপোর্ট। এরপর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে যাওয়া। এরপর লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে সংবাদ সম্মেলন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের বাসায় বঙ্গবন্ধু সাক্ষাৎ করতে যান। সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে তার বাড়ির সামনে গাড়ির দরজা নিজেই খুরে দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। লন্ডনের পরে দিল্লীতে বঙ্গবন্ধুর আগমন। সেখানে জনগণের সামনে তার ভাষণের চবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এরপর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে পা রাখার পর তাকে ঘিরে জনতার উল্লাস, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জিপে করে রেসকোর্স ময়দানে যাওয়ার ঐতিহাসিক আবেগঘন আলোকচিত্রটিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এরপর ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের আলোকচিত্রও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীতে ১৫টি আলোকচিত্র, ম্যাগাজিন ও পত্রিকার কপি ১৮টি এবং ১টি ডকুমেন্ট স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীটি চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। 

ইত্তেফাক/এএএম