শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

 কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০৬

মধ্যপ্রাচ্য বা মরুভূমি অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় উটের ভূমিকা অগ্রণী থাকলেও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলগুলোতে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলা ১৬টি নদ-নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন চার শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হচ্ছে ঘোড়ার গাড়িতে।

মাত্র ৫০ বছর পূর্বেও ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলাসহ বিভিন্ন নদনদীর বালুকাময় চরাঞ্চলগুলোতে নিত্যপণ্য পরিবহনে গরু বা মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা হতো। কালের পরিক্রমায় বদলে যেতে শুরু করেছে সেই চিত্র। এখন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে একমাত্র বাহন হিসেবেই চোখে পড়ে ঘোড়ার গাড়ি। নৌকার পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়িই চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সীমান্তবর্তী সাহেবের আলগা, কালির আলগা, পোড়ারচর, ঝুনকার চর, জাহাজের আলগাসহ দুর্গম চরগুলোতে সহজেই চোখে পড়ে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব গাড়ী। ধু ধু বালুময় চরের ওপর দিয়ে মালামাল নিয়ে ছুটে চলেছে শত শত ঘোড়ার গাড়ি।

চরাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানায়, বর্তমানে শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের বিশাল এলাকা জুড়ে চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এসব চরাঞ্চলে যান্ত্রিক কোনো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ঘোড়ার গাড়িই পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি গাড়িতে ১৫ থেকে ২০ মণ পণ্য অনায়াশেই পরিবহন করা যায়।

যাত্রাপুরের চরের ঘোড়ার গাড়ি চালক জলিল মিয়া ও আয়নাল হকসহ অনেকে জানান, গরুর গাড়িতে দুটি গরু বা মহিষ লাগায় খরচও বেশি। অথচ ঘোড়ার গাড়িতে একটি ঘোড়া হলেই হয়। এতে খরচও কম পড়ে। চরাঞ্চলে বালু বেশি থাকায় মালামাল পরিবহনে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল সম্ভব হয় না। সহজেই ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষসহ মালামাল আনা নেওয়া করা হয়। এতে সারা দিনে ৬০০-৮০০ টাকা আয়। তা দিয়ে সংসারের ব্যয়বহন করা হয়।

যাত্রাপুর হাটের নিত্যপণ্য ব্যবসায়ী মুকুল মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি থাকায় পণ্য পরিবহন সহজ হলেও শুকনো মৌসুমে বালুর গভীরতা বেশি থাকায় ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩৫-৪০টি চরের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য যাত্রাপুর হাটে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। তবে যাত্রাপুর হাটে মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম এখন ঘোড়ার গাড়ি। এসব চরাঞ্চলের শ শ মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

ইত্তেফাক/ ইআ