শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কেমন আছেন আফগান নারীরা

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:১৭

২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান ফের দখল করে তালেবান। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের জোরপূর্বক বিয়ে দিচ্ছে, তাদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হচ্ছে। এই সময়ে ঘরে কার্যত বন্দি করে রাখা হয়েছে। একনজরে দেখা যাক, কতটা দুর্দশায় আফগান নারীরা।  

পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা একা দূরে নয়
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নারীদের অধিকারের ওপর আরেকটি খড়গ বসায় তালেবান। নির্দেশনা দেয় আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না। যেতে হলে কোনো পুরুষ সঙ্গীকে সঙ্গে রাখতে হবে। একইসঙ্গে গাড়ির মালিকদের বলা হয়েছে, তারা যেন হিজাব না পরা নারীদের গাড়িতে না তোলেন। তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অব ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অব ভাইস নির্দেশনায় বলেছেন, কোনো চালক যেন কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন। এছাড়া, গাড়ির ভেতরে গানবাজনা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত 
আফগানিস্তান সরকার ২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খোলে। তবে, তালেবান নতুন করে ক্ষমতায় আসায় পরই সেই মন্ত্রণালয় ভেঙে দেয়। এর জায়গায় তালেবান একটি বিভাগ চালু করেছে যার প্রধান কাজ কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন প্রয়োগ করা। ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড নামিয়ে সেখানে নৈতিকতা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়।

নারীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিতকরণ
তালেবানের ক্ষমতায় আসায় পর দেশটির মেয়েদের বেশিরভাগ সেকেন্ডারি স্কুল এখনো বন্ধ রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) ২০২১ সালের অক্টোবরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে প্রাইমারির ওপরে মেয়েদের প্রায় সব স্কুলই বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান। তালেবানের ক্ষমতায় আসার আগে দেশটির মেয়েরা ৩৪ টি প্রদেশেই সেকেন্ডারি স্কুলে যেতে পারতো। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর রিপোর্ট অনুযায়ী কেবল ৭ প্রদেশে মেয়েরা সেকেন্ডারি স্কুলে যেতে পারছে। বাকি ২৭ প্রদেশের সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েদের জন্য কার্যত স্কুল যাওয়া বন্ধ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তালেবানের শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষকে আলাদা বসতে হবে। সবাইকে ‘ইসলামি পোশাক’ পরতে হবে।

নারীদের ওপর নির্যাতন 
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার আগে এমনিতেই আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের ওপর নির্যাতনের হার ছিল অত্যাধিক। তালেবানের ক্ষমতায় আসায় পর সেটি আরও বেড়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, আগফানিস্তানে ৮৭ শতাংশ নারী ও মেয়েরা তাদের জীবদ্দশায় নির্যাতনের শিকার হন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অব ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অব ভাইস-এর নির্দেশনায় গৃহ নির্যাতনের শিকার হলেও নারীদের স্বামীর সংসার ছেড়ে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। 
রাজনীতিতে নারী নিষিদ্ধ 
তালেবানের ক্ষমতায় আসার আগে আফগানিস্তানের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তবে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের ক্ষমতায় আসার আগে দেশটিতে পার্লামেন্টের সদস্যদের ২৮ শতাংশ ছিল নারী। 

টিভি, নাটকে নারীরা নিষিদ্ধ  
তালেবানের ক্ষমতায় আসার পর টেলিভিশন নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের পর্দায় হিজাব পরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। তবে কী ধরনের হিজাব পরতে হবে, তা বলা হয়নি। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন। ২০২১ সালের ১৫ আগস্টের পর ৭০০ নারী সাংবাদিকের মধ্যে ১০০ জনেরও কম নারী কাবুলে রেডিও বা টেলিভিশনে কাজ করছে। 

ইত্তেফাক/এনই