ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরে সমাহিত করা হবে খ্যাতিমান সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুর।
মাসুমা মায়মুর জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সেগুন বাগিচার বাসায় নেওয়া হবে। স্থানীয় মসজিদে জানাজার পর বাদ জোহর বনানী কবরস্থানের কাজী আনোয়ার হোসেনকে মায়ের কবরে সমাহিত করা হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কোনো আয়োজন রাখা হচ্ছে না জানান তিনি। বিষয়টি বিবেচনা করে লেখকের ভক্ত-অনুরাগীদের প্রতি সেগুন বাগিচার বাসায় ভিড় না করার অনুরোধ রেখেছেন।
এর আগে বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
তার পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুর ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, নিভে গেছে দীপ জনমের তরে, জ্বলিবে না সে তো আর। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনদিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনওদিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা? একা-শুধু একা? কী সব বকছি জানি না। আব্বা (কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই।চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর তার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচ বার তিনি হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফসাপোর্টে ছিলেন। আজ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। বিস্তারিত পরে জানাব। আপাতত মোবাইল অফ করে দিচ্ছি। ইনবক্সে নক না দেওয়ার অনুরোধ রইল।
কাজী আনোয়ার হোসেন একাধারে লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক। ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই লেখক। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন।
১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। নিয়মমাফিক কোনো প্রশিক্ষণ না নিলেও বাড়িতে গানের চর্চা সবসময় ছিল। তার তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এখনো রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারের সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন।